আন্তর্জাতিকপ্রধান প্রতিবেদন

আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র

আফগানিস্তান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল শনিবার (১ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।

গত মাসের মাঝামাঝি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী, ১ মে থেকে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু। আর আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসবে।

বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করেছিলেন। সেই সমঝোতা অনুসারে, ১ মের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় তালেবান প্রতিশ্রুতি দেয়, এ সময়ের মধ্যে তারা মার্কিন বাহিনীর ওপর কোনো হামলা করবে না। কিন্তু বাইডেন সেনা প্রত্যাহারের শেষ সময়সীমা পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর করেন।

সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ১ মে থেকে পিছিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর করায় তালেবানের হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে মার্কিন জেনারেল স্কট মিলার তালেবানকে সতর্ক করেছেন। তালেবানের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘কোনো ভুল কোরো না। জোটের সেনাদের ওপর হামলা হলে তার সমুচিত জবাব দেওয়ার সামরিক সক্ষমতা আমাদের আছে।’

আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহারের কাজ আগেই শুরু হয়েছে। ১ মের কার্যক্রম তার ধারাবাহিকতা মাত্র।

সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ায় কাবুল ও তার কাছের বাগরাম বিমানঘাঁটির আকাশে যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টারের আনাগোনা বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে বলে জানায় এএফপি।

আফগানিস্তানে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াই হাজার সেনা রয়েছে। দেশটি থেকে সব মার্কিন সেনা একসঙ্গে প্রত্যাহার করা হবে না। বরং ক্রমান্বয়ে সেনা প্রত্যাহার করা হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে।

মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়লে তালেবান আবার দেশটির ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

কাবুলে একটি প্রাইভেট রেডিও স্টেশনে কাজ করেন মিনা নওরোজি। তিনি বলেন, ‘সবাই ভীত। সবার মনে এই ভয় কাজ করছে, আমরা আবার তালেবানের অধীনে কালো দিনগুলোতে ফিরে যেতে পারি।’

মিনা নওরোজি বলেন, তালেবান আগের মতোই আছে। তারা মোটেও বদলায়নি।

অবশ্য আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির দাবি, সরকারি বাহিনী জঙ্গিদের কোণঠাসা করে রাখতে সক্ষম। তাঁর মতে, বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের অর্থ হলো তালেবানের যুদ্ধ করার আর কোনো কারণ নেই।

তালেবানের উদ্দেশে সম্প্রতি আফগান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘তোমরা কাকে মারছ? তোমরা কাকে ধ্বংস করছ? বিদেশিদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অজুহাত এখন শেষ।’

আফগানিস্তান থেকে সামরিক জোট ন্যাটোও তাদের মিশন প্রত্যাহার শুরু করে দিয়েছে। ন্যাটোর মিশন প্রত্যাহার শেষ করতে কয়েক মাস লাগতে পারে বলে জানান এক কর্মকর্তা।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়। সেই হামলার জেরেই আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে যায় যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযানে সঙ্গী হয় ন্যাটো।

যুক্তরাষ্ট্র তার সবচেয়ে দীর্ঘ এই যুদ্ধ চালাতে গিয়ে অনেক মাশুল দিয়েছে। আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াই হাজার সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। ডলার খরচ হয়েছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন। এখন আফগানিস্তানে সেনা রাখাকে অর্থহীন মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যে উদ্দেশ্যে মার্কিন সেনারা ২০০১ সালে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button