প্রধান প্রতিবেদন

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, নতুন ইতিহাস বাংলাদেশের

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি সুখবর এলো। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটে উন্নয়নশীল দেশের কাতারভুক্ত হলো দেশ।

গতকাল শুক্রবার রাতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় মূল্যায়ন শেষে এ ঘোষণা দেয়া হয়। সিডিপির প্ল্যানারি সেশন শেষে মূল্যায়নে বাংলাদেশের পাশাপাশি নেপাল ও লাওকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। বাদ দেয়া হয় মিয়ানমারকে।

এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন ইতিহাস ‍সৃষ্টি করল বাংলাদেশ; পদার্পণ করল নতুন যুগে। একসময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ির’ তকমা ঘুচিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় বিশ্বের দরবারে আসীন হচ্ছে।

দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও সরকারি নীতি নির্ধারকরা বলছেন, এই অর্জন বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক ও গর্বের।

জাতিসংঘের সিডিপি তিনটি সূচকের মানের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা মূল্যায়ন করে। সূচকগুলো হলো মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা। এ তিন সূচকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

২০১৮ সালের মার্চে প্রথম দফায় বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে। নিয়ম হচ্ছে, এলডিসি থেকে বের হতে জাতিসংঘের সিডিপির পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পেতে হয়। জাতিসংঘের সিডিপির দ্বিতীয় দফার বৈঠকেও বাংলাদেশ প্রতিটি সূচকেই প্রয়োজনীয় মানদণ্ডের যোগ্যতা অর্জন করেছে।

স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রস্তুতির জন্য তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু উত্তরণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ ও টেকসই করা এবং করোনার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে বাড়তি দুই বছর সময় পেয়েছে বাংলাদেশ।

সিডিপি বাংলাদেশকে এই দুই বছর সময়ও দিয়েছে। সেই হিসাবে ২০২৬ সালে উত্তরণ ঘটবে অর্থাৎ ওই বছরই উন্নয়নশীল দেশের আনুষ্ঠানিক মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশের কাতারে গেলে কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে। তা হলো উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহজ শর্তে ও কম সুদে ঋণ পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায়ে এখনও দুর্বলতা থাকায় বিদেশি ঋণের আরও দরকার আছে। এ জন্য বিকল্প উৎস খুঁজতে হবে।

তারা আরেকটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেন, তা হলো শুল্কমুক্ত সুবিধা চলে যাবে। বর্তমানে বাংলাদেশ এলডিসি হিসেবে ইউরোপের বাজারে এভরিথিং বাট আর্মস (ইভা) কর্মসূচির আওতায় রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর এই সুবিধা তখন থাকবে না। সে জন্য এখন থেকেই বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্রীকরণসহ প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

এলডিসি থেকে উত্তরণ নিয়ে গত ১২ জানুয়ারি জাতিসংঘের সিডিপির এক্সপার্ট গ্রুপের ভার্চুয়াল সভায় বাংলাদেশের অবস্থানপত্র তুলে ধরা হয়।

একইসঙ্গে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সামনে আসা নতুন চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে সরকার। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে সিডিপি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button