অর্থনীতি

করোনাকাল: আয় কমেছে ২০ শতাংশ; কোটিপতি বেড়েছে ৭ হাজার ৭১১ জন

করোনাকালের দেশের ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়েছেন উল্লেখ করে সম্প্রতি এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে। পরিবারের উপার্জন প্রায় ৭৪ শতাংশ কমে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, করোনাকালে মানুষের আয় কমেছে ২০ শতাংশ।

একইসঙ্গে ধনী ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত এক বছরে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে ৭ হাজার ৭১১। করোনাকালের ছয় মাসেই বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬৩। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৭৯ হাজার ৮৭৭ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে কোটিপতি সংখ্যাবৃদ্ধির হার ইঙ্গিত দেয় যে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে, আর গরিবরা আরও গরিব হচ্ছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই জাতীয় বৈষম্য দেশের প্রাথমিক উন্নতির সময়ে বাড়তে থাকে, যা পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে কমে আসে।

সম্প্রতি ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র (দৈনিক আয় ১.৯ ডলার)। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে।

উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ ও উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ।

যেসব পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে তার মধ্যে ৩৪.৮ শতাংশ পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। গত বছরের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে গড় পারিবারিক উপার্জন প্রায় ৭৪ শতাংশ কমে গেছে। দিনমজুরসহ অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরতরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত এক ওয়েবিনারে জানানো হয়, কোভিড-১৯-এর কারণে আয় কমেছে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ পরিবারের। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে সেসব পরিবার, যাদের বছরে আয় এক লাখ টাকার কম।

সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৫ ভাগ লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ। যার কারণে প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, মানে বড়লোক বাড়ছে। সাধারণ জনগণ প্রবৃদ্ধির সুফল পাচ্ছে না। যার প্রমাণ করোনার মধ্যে পাওয়া গেছে।

২০২০ সালের মার্চে যখন দেশে মহামারি করোনার আবির্ভাব শুরু হয়, তখন ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। গত সেপ্টেম্বরের শেষে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৮৮টি। অর্থাৎ, ছয় মাসে (১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর) ব্যাংক খাতে কোটি টাকা আমানত রাখা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৪ হাজার ৮৬৩টি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বর-এই তিন মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৪৫১। গত মার্চ থেকে জুন ওই তিন মাসে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ হাজার ৪১২ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এই বছরের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ৩৭ জন। গত মার্চ শেষে এই সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫ জন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বিগত ১২ বছর ধরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে। ২০০৯ সালের জুন মাস শেষে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ২১ হাজার ৪৯২ জন। এখন এই সংখ্যা ৮৭ হাজার ৪৮৮ জন। অর্থাৎ গত ১২ বছরে ৬৫ হাজার ৯৯৬ ব্যাংকের গ্রাহক কোটিপতির তালিকায় নতুন করে নাম লিখিয়েছেন।

ব্যাংক হিসাব মতে, দেশে ১ কোটি বা তারচেয়ে বেশি টাকার আমানত রয়েছে এমন ব্যক্তির সম্পদ ১০ শতাংশ বা ৪৮ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা বেড়েছে। এর ফলে ২০১৯ সালে ৮৩ হাজার ৮৩৯ জনে উন্নীত হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে ৮ হাজার ২৭৬ জন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button