প্রধান প্রতিবেদন

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নারীর মৃত্যু বেশি

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে নারীর মৃত্যুহার তুলনামূলক কম ছিল। কিন্তু গত মার্চ মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে নারীর মৃত্যু বেশি। গত ১ মার্চ থেকে শনিবার পর্যন্ত মৃতদের ৩২ শতাংশই নারী। এদিকে দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেশি মৃত্যু হচ্ছে ঢাকা বিভাগে। এ সময় ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের মৃত্যু বেশি হচ্ছে।

সরকার দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে গত বছরের ১৮ মার্চ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানায়, মৃত ব্যক্তি ছিলেন একজন ৭০ বছর বয়সী পুরুষ। শুরু থেকেই দেশে নারীর বিপরীতে পুরুষের মৃত্যুহার বেশি ছিল, দিনে দিনে সেটি আরও বাড়তে থাকে। দেশে শনিবার পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ২৮৩ জনের। এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ২৬ শতাংশ নারী আর ৭৪ শতাংশ পুরুষ।

মাঝে কয়েক মাস দেশে করোনার সংক্রমণ কম ছিল। এবার মার্চ মাস থেকে করোনার দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এবার দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যু বেশি হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের ১ তারিখ থেকে ১৭ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত করোনায় ১ হাজার ৮৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৭৬ জন পুরুষ । আর ৫৯৯ জন নারী।

কেন নারীদের মৃত্যু আগের চেয়ে তুলনামূলক বেশি হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্বের সব দেশেই দেখা যাচ্ছে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের রোগের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মৃতদের অনেকেই হয়তো জানতেন না যে তাঁর দীর্ঘমেয়াদি অন্য রোগ ছিল।

বিশ্বে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে চীনের উহানে। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি যৌথ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, চীনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৮০ শতাংশের বয়স ছিল ৬০-এর ওপরে। তাতে বলা হয়, ৬০ বছরের বেশি বয়সী এবং যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ ও দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসতন্ত্রের রোগ আছে, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

বাংলাদেশেও শুরু থেকে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বড় অংশের বয়স ষাট বছরের বেশি। গত মার্চ মাস থেকে ষাটোর্ধ্বদের মৃত্যু আরও বেড়েছে। গত মার্চের ১ তারিখ থেকে ১৭ এপ্রিল শনিবার পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিদের ৬০ শতাংশের বয়স ৬০ বছরের বেশি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের মৃত্যুহার ছিল ৫৬ শতাংশ।

সংখ্যায় কম হলেও শিশু ও তরুণদের মৃত্যুর ঘটনাও আছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মার্চ থেকে মৃতদের ১২০ জনের বয়স ৩১ বছরের কম। এর মধ্যে ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৮৬ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ২৪ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের ৭ জন এবং ১০ বছরের কম বয়সী ৩ জন করোনায় মারা গেছে।

গত বছরের ৯ জুলাই থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভাগওয়ারি মৃত্যুর হিসাব দিচ্ছে। জুলাই-আগস্টের দিকে দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর অর্ধেক ছিল ঢাকা বিভাগে। ধীরে ধীরে ঢাকা বিভাগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু আরও বাড়তে দেখা যাচ্ছে।

মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মার্চ থেকে শনিবার পর্যন্ত মৃত্যুর ৬৮ শতাংশ হয়েছে ঢাকা বিভাগে। অথচ এখন পর্যন্ত দেশের মোট মৃত্যুর ৫৮ শতাংশ হয়েছে ঢাকা বিভাগে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ঢাকা ছাড়া দেশের অন্যান্য সব বিভাগে মৃত্যু কমেছে।

মার্চ থেকে শনিবার পর্যন্ত মৃত্যুর ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ চট্টগ্রামে, খুলনায় ৪ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৬২ শতাংশ, ২ দশমিক ৮৩ শতাংশ বরিশালে আর ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ সিলেটে হয়েছে। রংপুরে ১ দশমিক ৮১ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম ১ দশমিক ১৭ শতাংশ মৃত্যু ময়মনসিংহ বিভাগে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button