আন্তর্জাতিক

করোনায় বিপর্যস্ত মিয়ানমারে ইঁদুর সাপে ক্ষুধা মেটাচ্ছেন লাখো মানুষ

গত মার্চে মিয়ানমারে করোনাভাইরাস প্রথম দফায় আঘাত হানার পর ৩৬ বছর বয়সী মা সু তার খাবারের দোকান বন্ধ করে দেন। উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খান তিনি। বাধ্য হয়ে নিজের সোনার গয়না বিক্রি, বন্ধক রেখে খাবার কিনেন।

দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেপ্টেম্বরে দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত ইয়াঙ্গুনে স্টে হোম নির্দেশনা জারি করে সরকার। আবারও মা সু তার দোকান বন্ধ করেন। এবার তার পোশাক, প্লেট ও অন্য আসবাব বিক্রি করে দেন।

বিক্রির জন্য আর কোনও কিছু অবশিষ্ট না থাকায় মা সুর নির্মাণশ্রমিক স্বামী মিয়ানমারের বৃহত্তম এ শহরের বস্তির পাশের উন্মুক্ত ড্রেনে খাবারের সন্ধান করেন। অশ্রুশিক্ত মা সু বললেন, লোকজন এখন ইঁদুর ও সাপ খাচ্ছেন। উপার্জন না থাকায় সন্তানদের এ জাতীয় খাবার খাওয়াতে হচ্ছে।

পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইয়াঙ্গুনের দারিদ্রপীড়িত বসতি হ্লেইং থার ইয়ারে বসবাস করেন মা সু; যেখানে সেখানকার বাসিন্দারা নিজেদের গৃহে আলোকসজ্জা করেন। ক্ষুধা নিবারণের জন্য এ এলাকায় রাতে কিছু প্রাণীর সন্ধান করেন মা সুর মতো দরিদ্ররা।

দেশটির গ্রামীণ এলাকায় লোকজন প্রায়ই ইঁদুর, সরীসৃপ ও পোকামাকড় ধরে খান। এখন শহরাঞ্চলের মানুষও তাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে একই ধরনের শিকার করছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ভয়াবহ করোনা প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে মিয়ানমার। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজারের বেশি মানুষ ও মারা গেছেন এক হাজারের বেশি।

ইয়াঙ্গুনে লকডাউনের কারণে লাখো মানুষ মা সুর মতো কর্ম হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে খুব কমই সহায়তা পাচ্ছেন তারা। স্থানীয় প্রশাসক ন্যা মিন তুন বলেন, হ্লেইং থার ইয়ার এলাকায় প্রায় ৪০ শতাংশ পরিবার সরকারি ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু অনেক কর্মক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক মানুষ খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল এনএলডির হ্লেইং থার ইয়ার এলাকার সাংসদ মিয়াত মুন থু। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা সেখানে দেয়া হলেও প্রত্যেকেই তা পাননি বলে স্বীকার করেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারির আগেই মিয়ানমারের ৫ কোটি ৩০ লাখ মানুষের এক তৃতীয়াংশ দারিদ্রের উচ্চ ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। সামরিক জান্তা শাসনের অধীনে কয়েক দশকের ধ্বংসাত্মক বিচ্ছিন্নতার পর দেশটি সবেমাত্র নতুন করে যাত্রা শুরু করলেও দারিদ্রের কড়াল গ্রাস পিছু ছাড়ছে না। অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে দেশটির অনেক নাগরিক এখন দারিদ্র নিমজ্জিত হওয়ার হুমকিতে রয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button