
সিলেট নগরের সোবহানীঘাট কাঁচাবাজারে ভোর থেকে ক্রেতাদের ভিড়। নগরের কাজীর বাজারেও ছিল ক্রেতাদের ভিড়। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের অনেকের মুখে নেই কোনো মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকেই। আবার কারও মুখে মাস্ক থাকলেও তা নেই যথাস্থানে।
গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে মাছ-সবজি কিনছেন ক্রেতারা। আড়ত থেকে কেনা সবজি ভ্যানে সাজিয়ে রাখছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যপাশে বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে আনা মালামাল নামাতে ব্যস্ত কয়েকজন শ্রমিক।
তবে নগরের প্রবেশমুখসহ অভ্যন্তরের সড়কগুলো ছিল ফাঁকা। কিছু সময় পরপর পণ্যবাহী ট্রাক ও কয়েকটি যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে। নগরের অভ্যন্তরে চলছে রিকশাও। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে ছিল সুনসান নীরবতা। ফাঁকা সড়কের কয়েকটি মোড়ে যাত্রীরা গন্তব্যে বেরিয়ে অপেক্ষা করছেন যানবাহনের।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে সারা দেশে আট দিনের লকডাউনের তৃতীয় দিন চলছে। তৃতীয় দিনে শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত নগর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
শুক্রবার সকালে নগরের মির্জাজাঙ্গাল, রিকাবীবাজার, জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ মোড়, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, চণ্ডিপুল, লাউয়াই, পিরোজপুর, কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, কাজীর বাজার, তালতলা, মুক্তিযোদ্ধা চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, সড়কগুলো ফাঁকা। সড়কে কোথাও পুলিশের কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি। পুলিশের কোনো সদস্যকেও সড়কে দেখা যায়নি। তবে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে পুলিশের একটি ভ্রাম্যমাণ দল দেখা গেছে। নগরের বন্দরবাজার, কাজীর বাজার ব্রিজ, রেলওয়ে স্টেশন, হুমায়ুন রশীদ চত্বর, মুক্তিযোদ্ধা চত্বরে কিছু অটোরিকশাকে যাত্রীদের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
হুমায়ুন রশীদ চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা আল আমিন বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়েছি। তবে কোনো যানবাহন পাচ্ছি না। মোটরসাইকেলে করে যাত্রী পরিবহন করা এক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনেক টাকা চেয়েছেন। এত টাকা সঙ্গে না থাকায় আরও একজন পাওয়া যায় কি না, দেখছি।’ তিনি বলেন, অটোরিকশায়ও একই ভাড়া চেয়েছে। তবে চালক গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। পথে পুলিশ যদি নামিয়ে দেয়—এ ভয়ও আছে। তারপরও জরুরি কাজ থাকায় মৌলভীবাজার যেতেই হবে। পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক দম্পতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, সিলেটে চিকিৎসা করাতে এসে এক আত্মীয়ের বাড়িতে লকডাউনে আটকা পড়েছিলাম। তাঁরা থেকে যেতে বলেছেন। তবে অন্যের বাড়িতে এত দিন বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আজ শুক্রবার বাড়ি চলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছি। এখানে বেশ কিছু সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছি। প্রাইভেট কার বা অন্য কোনো পরিবহন পাওয়া গেলে সেটি দিয়েই বাড়ি ফিরে যাব।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ উল্যাহ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, সিলেট মহানগর পুলিশের ছয়টি থানা এলাকার মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উদ্যোগে ২০টি তল্লাশিচৌকি স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে নগরের প্রবেশ মুখগুলোতে ৬টি ও নগরের অভ্যন্তরে ১৪টি চৌকি রয়েছে। এ ছাড়া থানা, ফাঁড়ি ও তদন্তকেন্দ্র এলাকাগুলোতে আরও ৮টি তল্লাশিচৌকি করা হয়েছে। মহানগর পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখার ২০টি ভ্রাম্যমাণ দল থানা এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। লকডাউন নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালিত হচ্ছে।