
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলার বেশ কয়েকটি অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এই মুহূর্তে প্রতিটি জেলার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে। ছয় জেলায় লাখো পরিবার এখন পানিবন্দী। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় বরিশাল জেলায় এক হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র, পটুয়াখালীতে ৯২৫টি, ভোলায় এক হাজার ১০৪টি, পিরোজপুরে ৭১২টি, বরগুনায় ৬২৯ এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
বরিশাল জেলায় কীর্তনখোলা নদী বিপদসীমা ২ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার হলেও পানি প্রবাহিত হচ্ছে দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায়। শহরের ভিতরে বটতলা, কাউনিয়া, বেলতলা, আমতলা মোড়ের খানসড়ক, পোর্টরোড সংলগ্ন এলাকায় প্লাবন দেখা গিয়েছে।
এছাড়া কাউয়ারচর, চরমোনাই মৌলভীরহাট, বাকেরগঞ্জের হলতা, গোমা ফেরিঘাট, শিয়ালগুনী বাজারসহ নদী তীরের এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে।
ঝালকাঠির সুগন্ধা-বিষখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঠালিয়ার বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চলে ইতোমধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ মে) বিকেলে কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদ এবং কাঠালিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকার বিষখালী তীরের বাঁধের একটা অংশ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে বাড়ির আঙিনাসহ তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। এতে আতঙ্কে রয়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’র প্রভাবে পটুয়াখালীর নদ-নদীতে জোয়ারের পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বছর আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কারের পরও জেলায় ৬১ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে। বেশি ঝুঁকিতে আছে ২০ কিলোমিটার বাঁধ।
এদিকে জোয়ারের পানির প্রবল চাপে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ উপচে জোয়ারের পানিতে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার অন্তত ১৬টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলা থেকে বিচ্ছিন্ন উপজেলা রাঙ্গাবালীর অরক্ষিত পাঁচটি চরাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার মানুষকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার প্রস্তুতি নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভোলায় জোয়ারের উচ্চতা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এতে ২৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের প্রায় ৮৫ হাজার পরিবার জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক গবাদিপশু।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে মেঘনায় জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৯৫ মিটার, যা বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। তবে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে পাউবো-১-এর বন্যা-জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কোনো ক্ষতি হয়নি। বাঁধের বাইরে ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আরিফ আহমেদ
বরিশাল