বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, কবি ও প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলা (৮০) পরলোকে গমন করেছেন। আজ রোববার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
কবি ও প্রকাশক তারিক সুজাত গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, বেশ কয়েক দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন প্রশাসক, গবেষক, সম্পাদক ও অনুবাদক মনজুরে মওলা। করোনা সন্দেহে নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসায় ৫ ডিসেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। এখানে চিকিৎসা চলছিল।
মনজুরে মওলার জানাজা ও দাফনের বিষয়ে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মনজুরে মওলার নানাবিধ পরিচয়, যিনি জীবনের শেষ দিনগুলোতেও কর্মক্ষম ছিলেন, লিখে গেছেন বিচিত্র বিষয়ে। লেখালেখি, সম্পাদনা, গ্রন্থ পরিকল্পনা—নানা কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন তিনি।
পেশাজীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে সব ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠেছে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পরিচয়টি। আশির দশকে প্রায় তিন বছর তিনি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার ইতিহাস।
‘একুশ আমাদের পরিচয়’ প্রত্যয়ে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তাঁর উদ্যোগে ঐতিহাসিক বর্ধমান ভবন সংস্কার, প্রথম জাতীয় ফোকলোর কর্মশালা আয়োজন, আরজ আলী মাতুব্বর বা খোদা বক্স সাঁইয়ের মতো লোকমনীষাকে ফেলোশিপ দেয়া, ‘বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস’, ‘ডেভিডসনের চিকিৎসাবিজ্ঞান’ কিংবা আনিসুজ্জামানের ‘পুরোনো বাংলা গদ্য’-এর মতো বই প্রকাশ হয়।
বাংলা একাডেমিতে তাঁর অসামান্য কীর্তি ‘ভাষাশহীদ গ্রন্থমালা’র ১০১ বই। অনেক বই এ সিরিজে প্রকাশিত হয়েছে, যা বিষয় হিসেবে ছিল নতুন। অনেকে এ সিরিজে লিখেছেন, যাঁরা পরে সে বিষয়ে অর্জন করেছেন বিশেষ পরিচিতি।
মনজুরে মওলা লিখেছেন দুটো কাব্যনাট্য—‘আমি নই’ ও ‘জালিয়ানওয়ালাবাগ’। রবীন্দ্র-বিষয়ে তাঁর অসাধারণ এক কীর্তি গ্রন্থমালা সম্পাদক হিসেবে তাঁরই পরিকল্পনায় রবীন্দ্রসার্ধশতবর্ষে রবীন্দ্রবিষয়ক ১৫১ বই প্রকাশ।
সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘দশমী’ বইটিকে কেন্দ্র করে ‘নষ্ট নীড়’ নামে বই লিখেছেন মনজুরে মওলা।
অনুবাদ করেছেন ইবসেনের নাটক ‘ব্র্যান্ড’, এলিয়টের ‘সুইনি’ ও ‘দ্য রক’, ‘গির্জায় খুন’। এলিয়ট অনুবাদের পাশাপাশি তাঁর ব্যাখ্যাভাষ্যও করেছেন সমান গুরুত্বে।
একসময় মনজুরে মওলা সম্পাদনা করতেন ‘শ্রাবণ’ নামের উঁচু মানের একটি সাহিত্যপত্র; যেন সে সম্পাদনা-কৃতিত্বেরই উত্তরকালীন নিদর্শন ধরা রইল তাঁর সম্পাদিত পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা (মূর্ধন্য, ২০১৭) ও বাংলাদেশের কবিতা ১৯৪৭-২০১৭-তে (মূর্ধন্য, ২০১৮)।
গোয়েন্দা-গল্পের ইতিহাস লেখায়ও মনযোগ দিয়েছিলেন মনজুরে মওলা।
গত ১ অক্টোবর ৮০তম জন্মবার্ষিকী ছিল কীর্তিমান এই ব্যক্তির।