আইন-আদালতপ্রধান প্রতিবেদন

চাকরির নামে প্রতারণা! কী করবেন?

দেয়ালে লিফলেট, পত্রিকায়, ব্যানারে কিংবা অনলাইনে লোভনীয় চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেছেন। বিজ্ঞাপনের শর্ত অনুযায়ী সাথে দিয়েছেন জীবনবৃত্তান্তসহ যাবতীয় কাগজপত্র। হয়তো কোনো ক্ষেত্রে শর্ত অনুযায়ী টাকাও দিতে হয়েছে। একদিন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান থেকে আপনার মুঠোফোনে আপনাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলো। সাক্ষাৎকারও আপনি ভালো দিয়েছেন, ভাবছেন এবার বুঝি এই সোনার হরিণ ধরা দিচ্ছে হাতে, হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু এই আনন্দক্ষণ অতি সামান্য সময়ের জন্যও হতে পারে। একটু সতর্ক ও সচেতন না হলে আপনি হতে পারেন প্রতারিত। চাকরির নাম করে প্রতারণার ঘটনা প্রায়ই ঘটতে দেখা যায়। সম্প্রতি প্রথম আলো পত্রিকায় ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরির ভুয়া অফার লেটার দিয়ে প্রতারণার ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়েছে।

যা জানবেন, যা মানবেন
কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য গেলে সাক্ষাৎকারের জন্য যাওয়ার আগে কিংবা পরে অথবা চাকরিতে যোগদান করার কথা বললে হুট করেই চাকরিতে যোগদান করা ঠিক হবে না। চাকরিতে যোগদানের আগে প্রথমেই জেনে নিন ওই প্রতিষ্ঠানটি আইনগতভাবে স্বীকৃত কিনা। কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা। বেতন-ভাতাদি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানুন, চাকরির ধরন সম্পর্কে জেনে নিন। কত ঘণ্টা কাজ করতে হবে, শিক্ষানবিশকাল কত দিন প্রভৃতি ভালোভাবে যাচাই করুন। নিয়োগপত্র গ্রহণের সময় নিয়োগপত্রে শর্তাবলি কী আছে, ভালোভাবে দেখে নিন। বিশেষ করে চাকরির শুরুতে কোনো প্রশিক্ষণের নামে কোনো ধরনের ফি দিতে বললে এখানে সন্দেহ করার কারণ রয়েছে। কোন বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং প্রশিক্ষণ শেষে কী কাজে আপনাকে নিয়োগ দেবে, এ বিষয়ে প্রয়োজনে লিখিত চুক্তি করে নিন। লিখিত চুক্তি করলে আপনি যদি কোনো কারণে প্রতারণার শিকার হন, তাহলে পরবর্তী সময় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সুবিধা হবে। প্রতিষ্ঠানটি যদি বিদেশি হয় কিংবা বিদেশে চাকরির কথা বলে, তাহলে আপনি সরকারের বৈধ কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই বিদেশ যাচ্ছেন কিনা, এই বিষয়ে খোঁজ নিন। মনে রাখতে হবে সরকারিভাবে নিবন্ধন করা ছাড়া এখন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নেই। আপনি কোনো বৈধ রিক্রুটিং এজন্সির মাধ্যমে বিদেশে চাকরির চেষ্টা করছেন কিনা, তা জেনে নিন। সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি অনেক রিক্রুটিং এজেন্সি আছে, যাদের প্রতিটির একটি লাইসেন্স নম্বর আছে। আপনি এই লাইসেন্স নম্বরটি যাচাই করে দেখুন সঠিক কিনা। আপনি প্রয়োজনে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সাথে যোগাযোগ করে যাচাই করে নিতে পারেন।

আইনের আশ্রয় কীভাবে নিবেন
চাকরির নামে কোনো প্রতারণার শিকার হলে প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। আপনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা এবং বিশ্বাসভঙ্গের মামলা করতে পারেন। ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণ চেয়ে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন। বর্তমান আইন অনুযায়ী প্রতারণার মামলা দায়ের করতে হয় দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদকে। তবে আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে আপনার কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে। এজন্য কোনো লিখিত নিয়োগপত্র, চুক্তি এসব চাকরিতে যোগদানের আগেই নিজের হেফাজতে রাখুন। বিদেশে চাকরির নাম করে টাকা দেয়ার সময় টাকা লেনদেন-সংক্রান্ত লিখিত চুক্তি করে নিন। চুক্তি করা থাকলে আপনার আইনি প্রতিকার পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।

লেখক : তানজিম আল ইসলাম/ আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button