জাতীয়

চিকিৎসা নিতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা খুন, আটক ছয়

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে খুন হয়েছেন সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুল করিম ওরফে শিপন। এ ঘটনায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ মাহমুদসহ ছয় জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

সোমবার (৯ নভেম্বর) দুপুরে ওই হাসপাতালে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ জড়িতদের শনাক্তের চেষ্টা করে। ভিডিও ফুটেজে আনিসুল করিমকে টেনেহিঁচড়ে হাসপাতালের একটি কক্ষের ভেতর নিয়ে মারধর করতে দেখা গেছে কয়েক কর্মচারীকে।

নিহত পুলিশ কর্মকর্তা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি গাজীপুর সদরের বারুদা এলাকার মুসলিমাবাদ রোডে।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আনিসুল করিমের ভাই রেজাউল করিম জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে কিছুদিন যাবৎ তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তাই তাকে সোমবার বেলা ১১ টার দিকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে ভর্তির ফরম পূরণ করার সময় কয়েকজন কর্মচারী তাকে দোতলায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা জানান, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। পরে তাকে দ্রুত হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রেজাউল করিম অভিযোগ করে বলেন, ‘হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ‘পুলিশের ওই কর্মকর্তা উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় তাকে শান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, ৭ থেকে ৮ জন আনিসুল করিমকে জাপটে ধরে মেঝেতে ফেলে চেপে ধরেন। এরপর নীল পোশাক পরা আরো দুজন কর্মচারী তার পা চেপে ধরেন। এ সময় মাথার দিক থেকে দুইজন কর্মচারী আনিসুলকে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। এক পর্যায়ে আনিসুল নিস্তেজ হয়ে গেলে একজন তার মুখে পানি ছিটান। এতে নাড়াচাড়া না করলে সাদা অ্যাপ্রোন পরা একজন নার্স রুমে ঢুকে তার বুকে পাম্প করেন।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মিয়া বলেন, ‘মাইন্ড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুল করিম অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের খাতায় লেখা রয়েছে ‘ব্রড ডেড’ অর্থাৎ সেখানে নিয়ে আসার আগেই তিনি মারা যান।’

এ বিষয়ে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মৃত্যুঞ্জয় দে বলেন, ‘ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ জব্দ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’ তিনি বলেন, নিহত পুলিশ সুপারের লাশ ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ‘গত ৮ নভেম্বর শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন এএসপি আনিসুল করিম। এ কারণে তিনি ১০ দিনের ছুটি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পরিবারের কাছে যান।’

তিনি বলেন, ‘সোমবার সকালে তাকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তির জন্য নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

প্রসঙ্গত, নিহত আনিসুল করিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩তম ব্যাচের বায়োকেমিস্ট্রির ছাত্র ছিলেন। ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন তিনি। তার তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button