স্বাস্থ্য

জনসনের এক ডোজই নিরাপদ ও কার্যকর

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এক ডোজের টিকা তৈরি করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। অর্থাৎ অন্য টিকার মতো এর দুই ডোজ নেয়া লাগে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক ডোজের এ টিকা বেশ নিরাপদ ও কার্যকর।

এ স্বীকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রে জনসনের এ টিকার অনুমোদন পাওয়ার পথ প্রশস্ত হবে। সম্ভবত কয়েক দিনের মধ্যে তা অনুমোদন পাবে। সে ক্ষেত্রে এটি হবে দেশটিতে অনুমোদন পাওয়া করোনার তৃতীয় টিকা। ফাইজার ও মডার্নার টিকার অর্থসাশ্রয়ী বিকল্প হবে এটি। এটি সংরক্ষণ করা যাবে রেফ্রিজারেটরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়। প্রয়োজন পড়বে না ফ্রিজারের।

জনসন অ্যান্ড জনসন জানিয়েছে, আগামী মাসের মধ্যে দুই কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। আর জুনের মধ্যে ১০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে করা একটি চুক্তির আওতায় তারা এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এর আগে এ টিকার কার্যকারিতাসংক্রান্ত ফল গত মাসে প্রকাশ করে জনসন অ্যান্ড জনসন। ওষুধ উৎপাদনকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান বেলজিয়ামভিত্তিক জ্যানসেন বলেছে, তারা যে তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে, সে অনুযায়ী গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রেও এ টিকা উচ্চমাত্রায় কার্যকর।

নিজেদের উৎপাদিত টিকার কার্যকারিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে তথ্য-উপাত্ত দাখিল করেছে জ্যানসেন। পর্যালোচনা শেষে এর কার্যকারিতা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্যসংবলিত নথি প্রকাশ করেছে এফডিএ। ওষুধ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি এই উপসংহারে এসেছে যে, করোনার উপসর্গযুক্ত ও গুরুতর অসুস্থতা—উভয় ক্ষেত্রে জনসনের টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত।

যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ট্রায়ালে (মানবদেহে পরীক্ষা) দেখা গেছে, করোনার তীব্র সংক্রমণে এটি ‘উচ্চমাত্রায় একই রকম’ কার্যকর। তবে সার্বিক সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে এটি কম কার্যকর। দেশ দুটিতে ভাইরাসের নতুন ধরনগুলোকে প্রভাব বিস্তারকারীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।

তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, গুরুতর অসুস্থতা প্রতিরোধে জনসনের টিকা ৮৫ শতাংশের বেশি কার্যকর। তবে সার্বিকভাবে কার্যকর ৬৬ শতাংশ। এই সার্বিক অবস্থার মধ্যে মধ্যম মাত্রার অসুস্থতাও অন্তর্ভুক্ত। টিকা গ্রহণের ন্যূনতম ২৮ দিন পরের অবস্থাও বিবেচনায় আনা হয়েছে এখানে।

এখন পর্যন্ত যাঁরা জনসনের টিকার ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের কেউ টিকা নেওয়ার ২৮ দিন পর মারা যাননি বা হাসপাতালে ভর্তি হননি।

আগামীকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি বৈঠকে বসবে। জনসনের টিকার অনুমোদন দেয়া এফডিএর উচিত হবে কি না, সে বিষয়ে সুপারিশের জন্য বৈঠকে বসবে তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে যেখানে ফাইজার ও মডার্নার টিকার দুই ডোজ প্রয়োজন, সেখানে জনসনের টিকা শুধু এক ডোজই লাগবে না; বরং এর কার্যকারিতার সুফল হিসেবে টিকাদানের জন্য তুলনামূলক কম চিকিৎসাকর্মী নিয়োগ দেয়াও যথেষ্ট হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে সাড়ে ছয় কোটির বেশি মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ১৩ লাখের মতো মানুষকে টিকা দেয়া হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে নতুন রোগী, হাসপাতালে ভর্তির হার ও কোভিড-১৯–এ মৃত্যুর ঘটনা কম দেখা যাচ্ছে। তবে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের রূপান্তর এ অগ্রগতির জন্য এখনো হুমকি বলে সতর্ক করে যাচ্ছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button