আইন-আদালত

জিয়া ও এরশাদের সেনা আইনের সিদ্ধান্ত জুনে

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সেনা শাসনামলে জারি হওয়া অর্ডিন্যান্সগুলোর বিষয়ে চলতি বছরের জুনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

মুন সিনামা হলের মালিকানা নিয়ে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৫ সালের আগস্টে জিয়ার শাসনামলে করা পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। ওই রায়ে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ে জিয়া ও এরশাদের সেনা শাসনও অবৈধ ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। ফলে রায় বহাল থাকে।

তবে রায়ে সামরিক সরকারের সময় জারি করা অর্ডিন্যান্স বিবেচনা করে প্রয়োজনীয়গুলো রেখে অপ্রয়োজনীয়গুলো বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘২০১৩ সালে হাইকোর্ট থেকে একটা রুলিং দেওয়া হয়েছিল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত এবং ১৯৮২ থেকে ৮৬ পর্যন্ত যে অর্ডিন্যান্সগুলো হয়েছিল, সেগুলো বাছাই করে, যেগুলো প্রয়োজন আছে সেগুলো আইন করতে হবে, যেগুলো প্রয়োজন নাই সেগুলো ড্রপ করে দিতে হবে।’

সামরিক শাসনের ওই সময়ে কয়েকশ অর্ডিন্যান্স ছিল। এসব আইন করা হবে, নাকি বাতিল করা হবে তা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ বলে জানালেন সচিব। তিনি বলেন, ‘সবগুলো (যাচাই বাছাই) হয়ে গেছে। এখন বাকি আছে ৫৯টি। প্রত্যেকটা মন্ত্রণালয় অনুযায়ী আজকে লিস্ট করে দেয়া হয়েছে। ক্যাবিনেট থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে আগামী জুনের মধ্যে অবশ্যই এগুলো সব আইনে পরিণত করতে হবে।’

এ কাজটি করার জন্য কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে আনোয়ারুল বলেন, ‘অনেক নতুন সচিব আছেন। তারা হয়তো জানেন না। তাদেরকে নিয়ে আগামী ২০ তারিখে বসে এগুলো নিয়ে ব্রিফ করে দিয়ে গাইডলাইন দিয়ে দেওয়া হবে।’

সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর নানা ঘটনার প্রবাহে রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণে চলে আসেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। ওই বছরের ৭ নভেম্বর নানা ঘটনাপ্রবাহের পর সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্র ক্ষমতায় তার নিয়ন্ত্রণ আরো পোক্ত হয়।

এক পর্যায়ে ১৯৭৬ সালের ১৯ নভেম্বর সামরিক আইন জারি করে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হন সে সময়ের মেজর জিয়াউর রহমান। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সেনা প্রধান থাকা অবস্থায় জিয়া হয়ে যান রাষ্ট্রপতি। উর্দি পড়া অবস্থায় ওই বছরের ৩০ মে ‘হ্যাঁ না’ ভোট দেন তিনি। বিস্ময়করভাবে ৯৮.৭ শতাংশ ভোট পড়ে ‘হ্যাঁ’র পক্ষে।

সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালের ৩ জুনের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও জেতেন জিয়াউর রহমান। ওই বছরের ডিসেম্বরে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন।

জিয়াউর রহমান বেশ কিছু আদেশ ও অর্ডিন্যান্স জারি করেন।

রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেন জিয়াউর রহমান। তবে এর আগে তার রাজনৈতিক উদ্যোগের নাম ছিল জাগদল।

জিয়াউর রহমানের দেখানো পথে সেনাপ্রধান থাকাকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানে জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ আবদুস সাত্তারকে পদত্যাগে বাধ্য করে রাষ্ট্রপতি হন এরশাদ। জারি করেন সামরিক আইন।

১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশ চলেছে সেনা শাসকের জারি করা অর্ডিন্যান্সে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button