স্বাস্থ্য

টিকার প্রথম ডোজ পাবেন ৬০ লাখ মানুষ

করোনার টিকাদান পরিকল্পনায় সরকার কিছুটা পরিবর্তন এনেছে। শুরুর ধাপে ৬০ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হবে। দেশে আরও টিকা আসা নিশ্চিত হওয়ার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ভবনে আয়োজিত ‘সংক্রমণ গতিবিধি ও করোনা টিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ তথ্য দেন। দেশের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত সভায় বক্তব্য দেন।

সভায় মূল বক্তব্যে এ এস এম আলমগীর বলেন, দেশে এ পর্যন্ত ১৮ লাখ ৪৮ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশের বেশি। প্রতিবেশী দেশ ভারতও তার ১ শতাংশ মানুষকে এখনো টিকার আওতায় আনতে পারেনি।

৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকাদান শুরু হওয়ার আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের হাতে ৭০ লাখ টিকা আছে। এই টিকা দুই ডোজ করে ৩৫ লাখ মানুষকে দেওয়া হবে। টিকার পরবর্তী চালান আসা নিশ্চিত হওয়ায় সরকার টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে বলে জানান আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০ লাখ টিকা আসবে ভারত থেকে। এ ছাড়া বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্স থেকে দেশের ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা দেওয়ার কথা ছিল। কোভ্যাক্স এখন দেশের ২৭ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা পাঠানোর কথা বলছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত কারিগরি কমিটির সদস্য ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বাংলাদেশের হাতে যে টিকা আছে, তার কিছু অক্টোবরে তৈরি। এর মেয়াদ শেষ হবে এপ্রিলে। বাকি টিকা তৈরি জানুয়ারিতে, এগুলোর মেয়াদ শেষ হবে জুনে। পৃথক মেয়াদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনছে।

অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ টিকা পাচ্ছেন বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগলে ভুল হবে। সারা পৃথিবীর মানুষ ভালো না থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকতে পারবে না। মনে রাখতে হবে এই টিকা ভাইরাস থেকে ১০০ শতাংশ সুরক্ষা নিশ্চিত করবে না। বিশেষজ্ঞদের প্রত্যেকেই মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার ওপর গুরুত্ব দেন। তাঁরা বলেন, টিকা নেওয়ার পরও এসব অব্যাহত রাখতে হবে।

অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক সমীর সাহা বলেন, নিউমোনিয়ার টিকার ব্যবহার শুরু হওয়ার ২২ বছর পর তা বাংলাদেশে এসেছিল। সেই তুলনায় খুব কম সময়ে করোনার টিকা পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং হয়েছে ৮০০–এর বেশি। দেশে জিনোম সিকোয়েন্সিং যন্ত্র ছিল না, তা কিন্তু নয়। এসব যন্ত্র ব্যবহার হতে দেখা যায়নি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, নিবন্ধন ও টিকাদান প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধি ও ধর্মীয় নেতাদের সম্পৃক্ত করা দরকার। এ ছাড়া টিকে নিলে এবং টিকা না নিলে কোন ধরনের ঝুঁকি বা সুবিধা আছে, তা মানুষকে ঠিকভাবে জানাতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button