বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ একটি জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট। এটি দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনের প্রচার ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা দিতে ব্যবহার হচ্ছে। এবার দ্বিতীয় আরেকটি কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’ উৎক্ষেপণের কাজ শুরু করছে সরকার।
যোগাযোগ ছাড়াও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ বা নেভিগেশনের মতো নানা কাজে নানা ধরনের স্যাটেলাইট প্রয়োজন হয়। এসব বিষয় মাথায় রেখে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট কেমন হবে তা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারসকে নিয়োগ করেছে বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)।
সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেই মহাকাশে পাঠানো হবে ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২’। সে হিসেবে ২০২৩ সালে ঘটবে উৎক্ষেপণ।
বিসিএসসিএল চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারস দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে স্যাটেলাইট সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। এর ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হবে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি কেমন হবে।
আরো বলেন, তারপরেই আমরা মাঠে নামব এটি সংগ্রহ করতে। আমরা মনে করি, যদি জুনে অর্ডার দিতে পারি, তাহলে দেড় বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের গোড়ার দিকে বা প্রথম কোয়ার্টারে আমরা স্যাটেলাইট পাঠাতে পারব।
দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের চিন্তা শুরু হয় ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরপরই। এর নকশা তৈরির পরামর্শক নিয়োগ করা হয় ২০১২ সালে। নকশা প্রস্তুত হওয়ার পর প্রায় ১ হাজার ৬৫২ কোটি টাকায় ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়ার স্পেসের কাছ থেকে কেনা হয় দেশের প্রথম স্যাটেলাইটটি।
এর ছয় বছর পর ২০১৮ সালের ১২ মে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ কেনাভেরালে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে মহাকাশে যাত্রা করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। ছয় মাস পর স্যাটেলাইটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ সম্পর্কে আরো জানা গেছে, দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারেও। সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ট্রান্সপন্ডার সংখ্যা ৪০। শুরুতে সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, এর ২০টি দেশের জন্য রেখে বাকিগুলো বিদেশি গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করা হবে। বিসিএসসিএল বলছে, উৎক্ষেপণের দুই বছরেও কোনো ট্রান্সপন্ডার বিদেশি কোনো গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা যায়নি।
জানা গেছে, যখন মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়, তখন পৃথিবীতে স্যাটেলাইটের সংখ্যা বেশি ছিল না। স্যাটেলাইট ব্যান্ডইউথ বা ফ্রিকোয়েন্সির দামও ছিল অনেক বেশি। কিন্তু দেখা গেল এটা উঠতে উঠতে অনেক দেশ অনেক স্যাটেলাইট তুলেছে। এতে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইডথের দাম কমে যায়। এ জন্য আগের পরিকল্পনা মতো বাইরে বিক্রি করা যায় নি।
তবে অফার রয়েছে। ফিলিপিন, ইন্দোনেশিয়া, নেপাল অফার দিয়েছে। তবে দাম তুলনামূলক কম বিধায় বিক্রি করা যায়নি।
অবশ্য বিদেশে ট্রান্সপন্ডার বিক্রি না হলেও দুই বছরেই নিজের আয়ে চলা শুরু করেছে বিসিএসসিএল। প্রতিষ্ঠানটি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘নিজের খরচে তো আমরা অবশ্যই চলি। বাৎসরিক আয়ের মাত্র এক শতাংশ লাগে এ কোম্পানি চালাতে। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো নিয়মিত বিল শোধ করলে এ কোম্পানি চালানো কোনো ব্যাপারই না। নিজস্ব টাকাতেই চলতে পারব।’