‘ব্যক্তিগত গোপনীয়তা’ সংক্রান্ত পরিবর্তন নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। এ পরিবর্তন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। অনেক ব্যবহারকারী ইতোমধ্যে অ্যাপটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকছেন। এতে চাপে পড়ে ডেটা শেয়ারিং সম্পর্কিত সেই আপডেট আপাতত পিছিয়ে দিল হোয়াটসঅ্যাপ।
৮ ফেব্রুয়ারি ডেটা শেয়ারিং-সংক্রান্ত আপডেটের সময়সীমা ছিল। ফেসবুক অধিকৃত এ সংস্থা জানিয়েছে, জনমানসে প্রাইভেসি ও সিকিউরিটি সংক্রান্ত ভুল ধারণা ভাঙানোর জন্য বিষয়টি স্থগিত রাখা হলো। জানানো হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক আপডেট নিয়ে অনেক মানুষের বিভ্রান্তির কথা আমরা শুনেছি। এই আপডেট ফেসবুকের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করার ক্ষমতা আমাদের দিচ্ছে না।’ ১৫ মে নতুন অপশন আসার আগে এই পলিসি নিয়ে ধীরে ধীরে ব্যবহারকারীদের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
আপডেটের যে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে তা হলো, ব্যবহারকারীর চ্যাট-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ফেসবুকের সঙ্গে শেয়ার করতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ। মূলত বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের জন্যই নাকি এটি করা হবে। কিন্তু এই অভিযোগ এ দিন পুরোপুরি অস্বীকার করেছে সংস্থাটি। ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে তারা ব্লগে লিখেছে, ‘না আমরা আপনাদের ব্যক্তিগত মেসেজ দেখতে পারি, না আপনাদের ফোনকল শুনতে পাই। আপনার শেয়ার করা লোকেশনও আমরা দেখতে পাই না। ফেসবুকও পায় না’। লোকেশন সংক্রান্ত সব তথ্য অ্যান্ড টু অ্যান্ড এনক্রিপটেড থাকে বলেও এ দিন দাবি করেছে হোয়াটসঅ্যাপ।
এরপর এই আপডেট সম্পর্কে হোয়াটসঅ্যাপ বলেছে, এটা একটি ব্যবসায়িক পরিষেবা। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক থেকে হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ম্যানেজ করতে, তথ্য চালাচালিতে সুবিধা হবে। ব্যবসায়িক ব্যবহার আরও সহজ করতেই ওই আপডেট বলে সাফাই হোয়াটসঅ্যাপের।
নতুন শর্তে যা ছিল
হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি–বিষয়ক নীতিমালা ও ব্যবহারের শর্ত পরিবর্তন নিয়ে কয়েকদিন ধরে বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করার জন্য ফেসবুকের সঙ্গে তথ্য শেয়ারের অনুমতি দিতে হবে। অন্যথায় হোয়াটসঅ্যাপ মুছে ফেলতে হবে। এমন শর্ত দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ।
হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের মালিকানাধীন হলেও স্বতন্ত্র একটি প্ল্যাটফর্ম। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় এটি খুবই সুরক্ষিত এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রযুক্তির প্ল্যাটফর্ম। তাই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীর তথ্য ফেসবুককে দিতে বাধ্য করার নতুন নিয়মটি অনেককে খেপিয়ে তুলেছে। রটেছে নানা ধরনের গুজব।
বলা হচ্ছে, হোয়াটসঅ্যাপের গোপনীয়তা সংক্রান্ত নীতিমালায় ফেসবুকের তথ্য শেয়ারের আপডেটটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে একটি হাস্যকর বিষয়ে পরিণত করেছে। হোয়াটসঅ্যাপের কাছে ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা কতটা অর্থহীন আপডেটটি কেবল তাই প্রদর্শন করে না, এটি ব্যবহারকারীদের তথ্য অবমাননার ক্ষেত্রে একটি নতুন রেকর্ড বলা যায়।
তাই ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে অনেকে হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প হিসেবে টেলিগ্রাম, ভাইবার ও সিগন্যাল ব্যবহার শুরু করেছেন।
নতুন নিয়ম
ব্যবহারকারীদের মনে উদয় হওয়া নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। নতুন নীতিমালা বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের গোপনীয়তার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না। আগে যা ছিল, তা-ই থাকবে। নতুন নিয়মে কল করা বা বার্তা আদান-প্রদানে গোপনীয়তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত মেসেজ দেখতে পায় না হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা কলের কথাও শুনতে পায় না। ব্যবহারকারীদের কল বা মেসেজের কোনো রেকর্ডও রাখা হয় না।
হোয়াটসঅ্যাপ আরো স্পষ্ট করেছে যে, ব্যবহারকারীরা হোয়াটসঅ্যাপে নিজের অবস্থান সম্পর্কে কাউকে জানালে সেটা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন দ্বারা সুরক্ষিত থাকে মানে তা শুধু প্রাপকই দেখতে পান, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক দেখতে পায় না। ব্যবহারকারী অনুমতি দিলেই কেবলমাত্র কন্ট্যাক্ট লিস্ট দেখতে পারে হোয়াটসঅ্যাপ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, মেসেজে আদান-প্রদান আরও দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য করা। ফেসবুকের অন্য অ্যাপকে ব্যবহারকারীর কনট্যাক্ট লিস্ট সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য দেয়া হয় না। গ্রুপগুলোও ব্যক্তিগতই থাকে। বিজ্ঞাপনী উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ফেসবুককে তথ্য দেওয়া হয় না। হোয়াটঅ্যাপে ব্যক্তিগত বার্তা গোপনীয় থাকে, শুধু প্রেরক ও প্রাপকই কেবল দেখতে পান। এ ছাড়া প্রেরক বার্তা পাঠানোর পর চাইলে তা মুছে দিতে পারেন, এমন অপশনও রয়েছে।
পরিবর্তনটা তাহলে কোথায়?
হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবসায়িক যোগাযোগ আর ব্যক্তিগত যোগাযোগ এক নয়। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে, পরিবর্তনটা মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত মেসেজ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে হবে, তাও আবার ঐচ্ছিক। প্রতিদিন লাখো মানুষ হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবসায়িক যোগাযোগ করে থাকেন। ছোট হোক বা বড় ব্যবসা, সব ক্ষেত্রেই এটি হয়ে থাকে। হোয়াটসঅ্যাপে আদান-প্রদান হওয়ায় ব্যবসায়িক তথ্যগুলো থেকে ক্রেতাদের আগ্রহ জানতে পারবে ফেসবুক। সে অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখাবে। তবে এক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ব্যবহারকারীদের জানিয়ে রাখবে হোয়াটসঅ্যাপ। অর্থাৎ যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এসব ফিচার ব্যবহার করছে, সে সম্পর্কে ব্যবহারকারীরা অবগত থাকবে। ব্যবহারকারীরা এসব ফিচার ব্যবহার করলে হোয়াটসঅ্যাপ আগেভাগে জানিয়ে দেবে, তার তথ্য ফেসবুককে কীভাবে দেওয়া হবে।