
বাংলায় ঔপনিবেশিক শাসনামলে নির্মিত ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান ও ভবনগুলোর মধ্যে অন্যতম নর্থব্রুক হল। পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে উঁচু ভবনটি লাল রঙের কারণে লালকুঠি হিসেবে পরিচিত।
১৮৭৪ সালে তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় বা গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক ঢাকায় সফর করেন। সফর স্মরণীয় করে রাখার জন্য ঢাকার কয়েক ধন্যাঢ্য ব্যক্তি ও জমিদার ‘টাউন হল’ধাঁচের একটি হল নির্মাণের উদ্যোগ নেন। মোগল স্থাপত্যরীতির সঙ্গে ইউরোপীয় কারুকাজের সংমিশ্রণে গড়া চার মিনার ও লাল গম্বুজের এ হলের নির্মাণকাজ ১৮৭৯ সালে শেষ হয়। ১৮৮০ সালে ঢাকার কমিশনার হলটি উদ্বোধন করেন। তখন নর্থব্রুকের নামানুসারে এর নামকরণ হয়।
পরে নর্থব্রুক হলকে গণগ্রন্থাগারে রূপান্তরিত করা হয়। ১৮৮২ সালে নর্থব্রুক হলের সঙ্গে ‘জনসন হল’নামে একটি ক্লাব মতান্তরে গণগ্রন্থাগার যুক্ত করা হয়। সেটি ‘নর্থব্রুক হল লাইব্রেরি’নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। এক হাজার বই নিয়ে ১৮৮৭ সালে গ্রন্থাগারটি চালু করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় অনেক বই নষ্ট হয়ে যায়।
ব্রিটিশ আমলে গুণীজনদের আনাগোনায় হলটি মুখর থাকত। ওই সময় ঢাকার বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ছিল এটি। মূল ভবনের ডান দিকে ছিল একটি বড় মঞ্চ। এখানে অভিনয় করতেন দেশবরেণ্য শিল্পীরা। এ হলে ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়া হয়।
নর্থব্রুক হল আজও টিকে আছে। তবে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’হিসেবে চিহ্নিত; তালাবদ্ধ। মূল হলের ভেতরে রয়েছে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণার একটি ভাঙা সাইনবোর্ড। ভেতরে আবর্জনা ফেলার কয়েকটি পাত্র। হলের সেই লাল রঙ আজ বড্ড মলিন। হলকে ঘিরে ফেলেছে ব্যবসাকেন্দ্র, দোকানপাট ও দালান।
ভবনের কাছের সড়কটির নাম নর্থব্রুক হল রোড। হলের বাঁ দিকে ফরাশগঞ্জ ক্লাব। ডানে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের অফিস ও কমিউনিটি সেন্টার। পেছন দিকে লালকুঠি ঘাট। এখান থেকে চাঁদপুরগামী লঞ্চ ছাড়ে।
শুরু থেকে হলটির চূড়া ও দেয়ালের কারুকাজ মুগ্ধ করে চলেছে সব দর্শনার্থীকে। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রাচীন ভবনটির পাশের অবকাঠামো ভেঙে এর ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
- রতন কুমার দাস