এক্সিম ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকির মামলায় এক মাসের জন্য জামিন পেয়েছেন সিকদার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রন হক সিকদার।
বাবা জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুতে দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার এ শিল্পপতি জামিন পেলেন আটকের পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রনকে গ্রেপ্তারের পর বেলা আড়াইটার দিকে তাকে আদালতে নিয়ে যায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
বেলা ৩টার দিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর আদালতের হাকিম মো. আশেক ইমামের আদালতে হয় শুনানি। তবে রনকে সেখানে নেয়া হয়নি।
রনর হয়ে শুনানি করেন তার আইনজীবী কে এম ফুরকান আলী ও সোহেল আমিন।
শুনানিতে আইনজীবীরা বলেন, সিকদার গ্রুপ দেশের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রন হক সিকদারের বাবা এ গ্রুপের চেয়ারম্যান, যিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাবার জানাজায় অংশ নিতে তিনি দেশে এসেছেন। এ অবস্থায় মানবিক কারণে যেন তাকে জামিন দেয়া হয়।
পরে ৫ হাজার টাকা বেলবন্ডে রনকে জামিন দেন বিচারক।
আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত জামিনে থাকবেন রন। সেদিন তাকে আবার আদালতে আসতে হবে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন হেমায়েত উদ্দিন খান হীরন। শুনানির সময় তিনি জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেননি।
রনর বিরুদ্ধে এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তাকে নির্যাতন ও গুলি করে হত্যাচেষ্টার মামলা আছে। এই মামলায় তার ভাই দিপু হক সিকদারও আসামি। তবে তিনি দেশে আসেননি।
ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করা রন দেশে এসেছেন তার বাবার মৃত্যুর কারণে । সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল হক সিকদার গত মঙ্গলবার দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা যান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট শিল্পপতির মরদেহ আজই দুবাই থেকে ঢাকায় নিয়ে আসার কথা আছে। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে সমাহিত হবেন তিনি।
বাবার শেষকৃত্যে অংশ নিতে রন এসেছেন দেশে। তবে তার আগেই তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় এই ইচ্ছা পূরণে আদালতের অনুমতি লাগবে।
এক্সিম ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা গত ১৯ মে মামলা করার আগে থেকেই দুই ভাই দেশের বাইরে চলে যান। পলাতক অবস্থায় তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়ার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে বিচারক ভর্ৎসনাও করেন তার আইনজীবীদের।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম সাকলাইন শিথিল নিউজবাংলাকে জানান, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
জয়নুলের দুই ছেলে রন ও দিপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে একটি ঘরে বন্দি করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।
মামলায় বলা হয়, সিকদার গ্রুপ এক্সিম ব্যাংকের কাছে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে চেয়েছিল। এরপর ব্যাংকটির দুই কর্মকর্তা ঋণ প্রস্তাবের বিপরীতে গ্রুপের বন্ধকি সম্পত্তি পরিদর্শনে যান।
পরিদর্শনে দেখা যায়, সিকদার গ্রুপের এমডির দাবির তুলনায় বন্ধকি সম্পত্তির মূল্য কম। তখন এ নিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে একটি অ্যাপার্টমেন্টে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
মামলায় বলা হয়, দুই ভাই তাদের গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি সাদা কাগজে সইও নিয়েছেন।
সিকদার গ্রুপের ব্যবসা আছে ব্যাংক, বিমা, বিদ্যুৎ, এভিয়েশন, আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো নানা খাতে।
বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সিকদার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা জয়নুল হক সিকদার। এর সহযোগী কোম্পানির মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক পোর্টস, পাওয়ার প্যাক ইকনোমিক জোন, সিকদার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, পাওয়ার প্যাক হোল্ডিংস, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও মাল্টিপ্লেক্স হোল্ডিংস।