জাতীয়

পাপুলের আসনে নজর পাঁচ নেতার

একাদশ সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-২ আসন নিয়ে যে নাটকীয়তা হয়েছে, তা এখনও তাজা। ওই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া কাজী সহিদ ইসলাম পাপুলের কারণে তা আজও বাসি হয়নি।

আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে লড়াইয়ে ছিলেন মোহাম্মদ নোমান। তবে ভোটের আগে আগে হঠাৎ তিনি নির্বাচনি মাঠ থেকে সরে যান। আর তখন পাদপ্রদীপে আসেন পাপুল।

বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনটিতে পাপুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জিতেন অবলীলায়, যদিও দলটি ভোটের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন করছে।

পরে জানা যায়, সাধারণ শ্রমিক হিসেবে কুয়েতে গিয়ে ধনকুবের বনে যাওয়া পাপুলের সে দেশে সাজা হয়েছে মানব পাচার ও অর্থ পাচারের দায়ে। গত ২৮ জানুয়ারির এ রায়ের ঘটনায় পাপুল সংসদ সদস্য পদ হারাচ্ছেন, এটা জানা ছিল। তবে রায়ের কপি দেশে আসতে কিছুটা দেরি হওয়ায় সিদ্ধান্ত আসতে দেরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার কপি সংসদ সচিবালয়ে আসার পর গতকাল সোমবার প্রথম কার্যদিবসেই স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়ে দিলেন সিদ্ধান্ত। পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করে জারি হয়েছে প্রজ্ঞাপন।

পাপুলের সাজা হওয়ার পর পর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। মনোনয়ন পেতে নানাভাবে দলের কেন্দ্রে চেষ্টা তদবির করছেন তারা। স্থানীয়ভাবেও জানান দিচ্ছেন আগ্রহের কথা।

জেলা সদর উপজেলার একাংশ ও রায়পুর উপজেলা নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেও এবার স্থানীয় অন্তত তিনজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশন অবশ্য এখনও ভোটের তফসিল ঘোষণা করেনি। তবে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে এখানে ভোট আয়োজনের বাধ্যবাধকতা আছে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সহসভাপতি এহসানুল কবির জগলুল বলেন, ‘আমি মনোনয়ন চাই। দল থেকে মনোনয়ন পেলে আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব।’

মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তিনি বলেন, ‘আমি প্রার্থী হতে চাই। তবে বিস্তারিত জানাব দুই-তিন দিন পরে।’

নৌকা চান রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন খোকন, কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শামছুল ইসলাম পাটওয়ারী, জেলা যুবলীগের সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুও।

কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত পেলে সংসদীয় আসনে আটঘাট বেঁধে ভোটের মাঠে নামার প্রস্তুতি রয়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদেরও।

জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূঞা বলেন, ‘উপনির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি জয়লাভ করবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে।’ বিএনপি থেকে সম্ভাব্য মনোনয়প্রত্যাশী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঞা ও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সমন্বয়কারী কর্নেল (অব.) আবদুল মজিদের নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে।

বিএনপির বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনেও আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হয়ে যান জাতীয় পার্টির জেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ নোমান।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের মনোনয়ন পেয়েও ভোটের মাঠ হঠাৎ ছেড়ে দেন তিনি। সে সময় কথা ওঠে পাপুলের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন তিনি। যদিও সে অভিযোগ স্বীকার করেননি। পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিলের সম্ভাবনার কথা চাউর হওয়ার পরও নোমানের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য শেখ মোহাম্মদ ফায়েজ উল্লাহ শিপন আশা করছেন, গত দুই নির্বাচনের মতো উপনির্বাচনেও তাদেরকে আসনটি ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ।

কে কবে জিতেছেন
১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে এখান থেকে জেতেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ উল্লাহ। পরের বছরের উপনির্বাচনে জেতেন একই দলের ড. আউয়াল ১৯৭৪।

জিয়াউর রহমানের আমলে বিএনপি গঠনের পর আসনটি চলে যায় তাদের দখলে।

১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে জেতেন খোরশেদ আলম চৌধুরী।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টির আমলে ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে লাঙ্গল নিয়ে জেতেন খোরশেদ আলম চৌধুরী।

১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মোহাম্মদ উল্লাহ, ১৯৯৬ সালে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেতেন।

বিএনপি নেত্রী আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জেতেন আওয়ামী লীগের হারুনুর রশিদ।

এর পরের দুই নির্বাচনে ২০০১ ও ২০০৮ সালে জেতেন বিএনপির আবুল খায়ের ভূঞা।

২০১৪ সালে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান ও ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র পাপুল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button