প্রতি বছর একুশে বইমেলা এলে উল্লেখযোগ্য হারে নতুন বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু একজন লেখক এবং প্রকাশক উভয়কেই তার মেধাস্বত্বের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। একটি বইয়ের কপিরাইট কীভাবে অর্জিত হয়, কীভাবে তা বজায় থাকে, তা জানতে হবে এবং মানতে হবে। একটি বই লিখে কিংবা প্রকাশ করেই কিন্তু থেমে থাকা উচিত নয়। বই বা অপ্রকাশিত পাণ্ডলিপি হোক না কেন এটি একটি সম্পত্তি। এ সম্পত্তি হচ্ছে মেধার সম্পত্তি। জায়গাজমির যেমন দখল এবং মালিকানা বজায় রাখতে হয়, তেমনি মেধার সম্পদেরও মালিকানা এবং দখলস্বত্ব থাকতে হবে। লেখক কিংবা প্রকাশক যেই হোক না কেন প্রত্যেকেরই কপিরাইট নিয়ে কিছু বিষয় মেনে চলা প্রয়োজন।
কপিরাইট নিবন্ধন করুন:
যেকোনো বিষয়ের বই সাহিত্যকর্ম হিসেবেই কপিরাইট দাবি করা যাবে। প্রথমত, কপিরাইটের মালিক হচ্ছেন বইয়ের প্রণেতা বা লেখক। সাহিত্যের ক্ষেত্রে লেখকের জীবনকাল এবং মৃত্যুর পর থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত কপিরাইট থাকে। এ ৬০ বছর লেখকের উত্তরাধিকারীরা ভোগ করেন। ৬০ বছর পর কপিরাইটের অধিকার সাধারণ জনগণ ভোগ করতে পারবে।
কপিরাইট সুরক্ষার জন্য লেখক বা প্রণেতার উচিত তার বইটির কপিরাইট নিবন্ধন করে নেয়া। কপিরাইট শুধু প্রকাশিত বইয়ের ক্ষেত্রেই করা যায় তা নয়, পাণ্ডলিপির কপিরাইট নিবন্ধন করা যায়। কপিরাইটের নিবন্ধনের জন্য ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত কপিরাইট কার্যালয় থেকে নির্ধারিত আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এই আবেদনপত্রে যে বিষয়টি কপিরাইট করতে চান, তার সব বিবরণ, স্বত্ব কার নামে হবে, শর্ত কী হবে প্রভৃতি বিষয় পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্র তিন কপি জমা দিতে হবে। পা-ুলিপি বা বই দুই কপি করে জমা দিতে হবে। যে বিষয়টি কপিরাইট নিবন্ধন করার জন্য আবেদন করা হয়েছে, তার ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত ফি ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে হবে। এর সঙ্গে ৩০০ টাকার নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে। কেউ যদি আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদনপত্র দাখিল করতে চান, সেক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে ওকালতনামা দাখিল করতে হবে।
বই বা পাণ্ডলিপি নকল করলে:
কোনো লেখক বা প্রণেতার বই বা পা-ুলিপি নকল করা আইনের চোখে অপরাধ। এজন্য দেওয়ানি আদালতে সরাসরি প্রতিকার চাওয়া যাবে। জেলা জজ আদালতে ক্ষতিপূরণ এবং নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য প্রতিকার চাওয়া যাবে। আবার ফৌজদারি মামলারও সুযোগ রয়েছে। কপিরাইট ভঙ্গকারী হিসেবে প্রমাণিত হলে হবে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা। মনে রাখা জরুরি গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই নকল বই জব্দ করার ক্ষমতা পুলিশের রয়েছে।
যা মেনে চলা উচিত:
যেকোনো মৌলিক পা-ুলিপি প্রকাশকের হাতে তুলে দেয়ার আগে লিখিত চুক্তি করে নেয়া উচিত। এর আগে পা-ুলিপিটিও কপিরাইট করে নিতে পারেন। প্রকাশকের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে কপিরাইট আইন মেনে। চুক্তিতে অবশ্যই স্বত্বের অধিকার, মেয়াদ, রয়্যালটির পরিমাণ উল্লেখ থাকতে হবে। চুক্তিনামাটিও কপিরাইট অফিস থেকে নিবন্ধন করে নেয়ার সুযোগ আছে।
লেখক: তানজিম আল ইসলাম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট