
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কুলঘেষা জেলা বরগুনা । ভাষাগত দিক দিয়ে এ জেলার মানুষ বাংলা ছাড়াও নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন।
“তুমি”, “তুই”, “আমি”, “মুই”, “আমরা”, “মোরা”, “আসি”, “আই” “বলছি”, “কইছি”, “সেটা”, “হেইয়া”, “তাদের”, “হ্যাগো” ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারে অভ্যস্ত ।
বরগুনায় চার ধর্মের লোক বসবাস করেন । মুসলমান ও হিন্দু সর্বত্র, রাখাইন (বৌদ্ধ) আমতলী উপজেলা তালতলী ও বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়ন ও বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের দেশান্তরকাঠীতে খ্রীস্টান ধর্মের লোক বসবাস করেন।
উপকূলীয় এ জেলায় সাধারণত: ৩ ধরণের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড প্রচলিত রয়েছে । যেমন
১. লোক সংস্কৃতি
২. শাস্ত্রীয় সংস্কৃতি
৩. রাখাইন সংস্কৃতি
লোক সংস্কৃতি
একসময় সমৃদ্ধ উপকূলীয় অঞ্চলে ছিল মাঠ ভরা ধান, নদী-সাগরে মাছ, গরু-মহিষের দুধ, তাঁতের শাড়ি, ঘানির তৈল, মাড়াই কলে আখের গুড়সহ বিচিত্র প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য। সৌভাগ্য ছিল ঘরে ঘরে। তবে অভাব অভিযোগ না থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি ছিল নিত্যসঙ্গী। অধিকাংশ মানুষের মধ্যে ছিল লোক সংস্কৃতিরচর্চা। আর এই লোক সংস্কৃতির বিষয়বস্তু ছিল সুখ-সমৃদ্ধি আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন্দ্র করে। লোক সংগীতে এলাকার মানুষের সহজ-সরল প্রকৃতি ও আদর আপ্যায়নের চিত্রও ফুটে ওঠে। যেমন একটি গান:
মোগো মেজাজ নাহি গরম, ব্যাবাক্কে মিল্লা কয়,
মোগো মেজাজ নাহি করা, হগলড্ডি মিল্লা কয়
আদর আস্তিক ভালই জানি, কতা হেইডা মিত্যা নয় ।
শাস্ত্রীয় সংস্কৃতি
বরগুনার মানুষ উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে নাট্য ও সাংস্কৃতিক চর্চাও করে থাকে। নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী, খেলাঘর, গ্রাম থিয়েটার, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, লোক সংগীত শিল্পী গোষ্ঠী, রবীন্দ্র সংগীত পরিষদ, নজরুল সংগীত পরিষদ ইত্যাদি। এ সব সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মসূচি একদিকে যেমন বিনোদনমূলক, অন্যদিকে মানবিক মূল্যবোধ ও দেশাত্ববোধ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।
রাখাইন সংস্কৃতি
মূলত: বরগুনার দক্ষিণাঞ্চলে মঙ্গলিয় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাস। বাঙ্গালী সংস্কৃতির সঙ্গে রাখাইন সংস্কৃতির মিশ্রণ সমৃদ্ধ করেছে এখানের সংস্কৃতিকে। রাখাইনদের নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থায় রয়েছে বৈচিত্র্যময় কুটির শিল্প, কৃষি কাজ, শূকরসহ পশু পালন । একইসঙ্গে সামাজিক অনুষ্ঠানাদির মধ্যে রয়েছে জলক্রীড়া, ফানুস ছোড়া, পিঠা উৎসব ইত্যাদি। রাখাইনদের বিশেষ অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বাঘ শিকার, প্রেমময় নৃত্যানুষ্ঠান কিন্নর নাচ, রাক্ষস নাচ, বানর নাচ ইত্যাদি। তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গৌতম বৌদ্ধের জন্মবার্ষিকী উদযাপন, মাঘী পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা, রাস উৎসব ইত্যাদি।