বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের দ্বন্দ্বের জেরে অচল হয়ে পড়েছে দক্ষিণ বঙ্গের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা।
মেসে হামলার ঘটনায় করা মামলায় সব অভিযুক্তদের নাম অর্ন্তভুক্ত করার দাবিতে শনিবার সকাল ৯টা থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। আর হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই পরিবহন শ্রমিকের মুক্তির দাবিতে রূপাতলী বাস শ্রমিকরাও বাস বন্ধ রেখে সড়কে নেমেছেন।
আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রুপাতলী মিনিবাস টার্মিনালের সামনে সুরভী চত্বরে বিক্ষোভ করছেন পরিবহন শ্রমিকরা।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে নাজেহাল বরিশালবাসী। বরিশাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ রুটে দেখা দিয়েছে অচলাবস্থা। এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
কোথাও টায়ার জ্বালিয়ে, কোথাও বাঁশ, বেঞ্চ বা কাঠের তক্তা ফেলে রাখা হয়েছে। এ কারণে যানবাহন থেকে নেমে অনেকে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হয়েছেন। দফায় দফায় মহাসড়ক অবরুদ্ধ হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এ রাস্তায় নিয়মিত চলাচলকারীরা।দিনের পর দিন এই অবরোধে সাধারণের ভোগান্তি কেন কারও চোখে পড়ছে না।
নগরীতে সড়কে অবস্থান নেয়া বরিশাল পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলায় আমাদের শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা জড়িতই না। আমাদের কোনো লোক ছাত্রদের মারধর করেনি। কারা করেছে তাও জানিনা। আমরা তাদের ওপর হামলার ঘটনারও নিন্দা জানিয়েছি। তবে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের দুই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, গ্রেপ্তার শ্রমিকদের মুক্ত না করা হলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করা হবে।
এর আগে মেসে হামলার ঘটনায় শুক্রবার গভীর রাতে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকারও করেছেন বলে জানান ওসি।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হামলার ঘটনায় মামলা করলে আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়। শুক্রবার গভীর রাতে রুপাতলী বাস স্ট্যান্ডের একটি বাসের ভেতর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাউথ বেঙ্গল পরিবহনের হেলপার ফিরোজ মুন্সী ও এমকে পরিবহনের সুপারভাইজার আবুল বাশার রনিকে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চলছে বলে জানান ওসি নুরুল।
এর আগে শুক্রবার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তাদের অভিযোগ করা হামলাকারীদের নাম মামলায় দেয়া হয়নি। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে মশাল মিছিল করেন তারা। এর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে দাবি পূরণের জন্য ১৩ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সড়ক থেসে সড়ে যান তারা।
সময়সীমা শেষ হওয়ায় আবারও মহাসড়কে নেমেছন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. সুব্রত কুমার দাস বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যে তিনটি দাবি ছিলে সেগুলো মানা হয়েছে। তাদের এখন কী দাবি রয়েছে সেটা শুনব। তারপর সেই অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর রুপাতলী বাস টার্মিনালে বিআরটিসি কাউন্টারের এক কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত ও এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ রয়েছে, একই দিন রাতে নগরীর রুপাতলী হাউজিংয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি মেসে গিয়ে পরিবহনশ্রমিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে আহত হন ১১ শিক্ষার্থী।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৭টা থেকে ১০ ঘণ্টা ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মামলা করার আশ্বাসে তারা অবরোধ স্থগিত করেন।