
সৌদি আরবে বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবরিন বেগম হত্যা মামলায় প্রধান আসামি সৌদি গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে সে দেশের একটি আদালত।
সাজা পেয়েছেন গৃহকর্তাও। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল আলামত নষ্ট ও নির্যাতিত হওয়ার পর গৃহকর্মীকে চিকিৎসা না দেয়া।
এ দম্পতির সন্তানও মামলার আসামি ছিলেন। তাকেও সাজা দেয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বাংলাদেশি আবরিনকে নানাভাবে হেনস্তা করতেন।
গতকাল রোববার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের অপরাধ আদালত এ রায় দেন। রায়ে ওই গৃহকর্ত্রীর স্বামী বাসেম সালেম ও ছেলে ওয়ালীদকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে।
দেশটিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি নারীর নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ আছে। প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। অর্থ উপার্জনের আশায় গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে দেশে ফিরেছেন বহু শ্রমিক। এসব ঘটনা জানাজানি হয়ে যাওয়ার পর সংসারেও ফিরতে পারছেন না বহু নারী। তারা এখন দেশে সেফ হোমে অবস্থান করছেন।
এসব ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মধ্যে প্রথম এই রায় আসার কথা নিশ্চিত করেছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস।
দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ কাউন্সিলর মেহেদী হাসান বলেন, ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় গৃহকর্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া আলামত ধ্বংস ও গৃহকর্মীকে চিকিৎসা না দেয়ার দায়ে গৃহকর্তা বাসেম সালেমনকে ৩ বছর ২ মাস কারাদণ্ড ও ১১ লাখ ২৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
অপর আসমি ওই দম্পতির কিশোর ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমেরও বিচার হয়েছে এই মামলায়। তবে তার বিরুদ্ধে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তবে গৃহকর্মী আবরিনকে নানাভাবে হেনস্তা করার দায়ে তাকে সাত মাসের জন্য কিশোর সংশোধনাগারে থাকার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
এই রায়ের বিরুদ্ধে ১৬ মার্চ পর্যন্ত আপিলের সুযোগ রয়েছে।
এর আগে আবিরনের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন আদালত। হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি সৌদি শরিয়া আইন অনুযায়ী সাজা দেয়া হবে বলেও তখন জানানো হয়।
২০১৯ সালের ২৪ মার্চ সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আজিজিয়ায় সৌদি গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনে নিহত হন বাংলাদেশি গৃহকর্মী আবিরন বেগম, যা পরবর্তীকালে হত্যাকাণ্ড বলে হাসপাতালের ফরেনসিক রিপোর্টে জানা যায়।
সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফেরা নারীদের হিসাব রাখছে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্ক।
সেখানকার হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে একই বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে সৌদি আরব থেকে দেশে ২২ জন নারী গৃহকর্মীর মরদেহ এসেছে।
এদের সিংহভাগই হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
২০১৬ সাল থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৫০০ নারীর মরদেহ এসেছে। এদের মধ্যে ৮১ জনের আত্মহত্যার তথ্য রয়েছে। বাকিরা হত্যার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ আছে।
এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো বিচার পায় না বলেও নানা সময় আলোচনা হয়েছে।