
২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিশ বছরে রাজধানীতে ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে তিন গুণ। কন্সট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল, জমি ও নিবন্ধন খরচ বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। এর বেশি দাম বেড়েছিল ২০০০-২০১০ দশকে। ওই সময় ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছিল আট গুণ।
ফ্ল্যাটের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ উচ্চ নিবন্ধন ফি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ফি কমানোর পাশাপাশি গৃহঋণের পরিমাণ বাড়ানো ও ঋণের সুদ কমাতে পারলে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়াবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত মনিটারি পলিসি রিভিউ প্রতিবেদনে আবাসানখাত নিয়ে এক বিশ্লেষণে একথা বলা বলা হয়েছে।
রিভিউতে বলা হয়, ফ্ল্যাটের মোট দামের উপর বাংলাদেশে নিবন্ধন ফি ১৪ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলেও এখনো এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে এ হার বেশি।
এশিয়ায় আবাসনখাতে সবচেয়ে কম রেজিস্ট্রেশন ফি হংকংয়ে। এরপর মালয়েশিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর ও চীনে। বাংলাদেশের মত খরচ বহন করতে হয় থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানে।
ফ্ল্যাট কেনাবেচা থেকে সরকার বর্তমানে গড়ে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন খরচ ৫-৬ শতাংশে নামিয়ে আনা গেলে এ আয় আরো অনেক বাড়বে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আবাসন খাতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্যাপক বিনিয়োগের কারণে এ সময় ফ্ল্যাটের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে বলে রিভিউতে বলা হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরোর গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের পরই রেমিটেন্সের অর্থ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় ঘরবাড়ি কেনা বা তৈরি করতে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত বারিধারায় জমির দাম সবচেয়ে বেশি। বারিধারা থেকে স্বল্প দূরত্বের বাড্ডায় জমির দাম সবচেয়ে কম।
জমির দাম বৃদ্ধি ফ্ল্যাটের দামেও প্রভাব ফেলে। অভিজাত এলাকায় জমির দাম বেশি হওয়ায় ফ্ল্যাটের দামও বেশি। আবার এসব এলাকায় বড় আকারের ফ্ল্যাট বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এ কারণে বড় ফ্ল্যাটের দাম, ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চেয়ে অনেক বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট। মোট বিক্রির ৬০-৬৫ শতাংশই মাঝারি ফ্ল্যাট।
কৃষির পরে এ খাতে সবচেয়ে বেশি শ্রমশক্তি নিয়োজিত। রিহ্যাবের হিসেবে সংখ্যাটি ৩৫ লাখের মত। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পিছনে এ খাতের পাশাপশি লিংকেজ খাতগুলোর ভূমিকা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জিডিপিতে আবাসন ও নির্মাণ খাতের অবদান কমে আসছে। ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে আবাসন খাত জিডিপির ১৬.৮ শতাংশ হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ১৪ শতাংশে নেমেছে।
আবাসানখাতের উন্নয়নে গৃহঋণ তহবিল থেকে ঋণদানের পরিমাণ বাড়ানো ও সুদের হার কমানোর পাশাপাশি এ ব্যবসাকে বিকেন্দ্রীকরণের সুপারিশ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রিভিউতে বলা হয়, রিয়েলস্টেট কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৯৮ শতাংশই ঢাকা শহরে ব্যবসা করছে। বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারলে নতুন ক্রেতা যেমন পাওয়া যাবে তেমনি ব্যবসাও টেকসই হবে। ক্রেতাদের ৫ শতাংশ হারে ঋণ দিতে পারলে মধ্যবিত্তরা ফ্ল্যাট কিনতে আগ্রহী হবে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) থেকে নেয়া গৃহঋণের বর্তমান সুদহার ১১-১২ শতাংশ, এটিও কমিয়ে আনতে হবে।