প্রধান প্রতিবেদন

বাকশালের লক্ষ্য ছিল ঐক্যবদ্ধ জাতির উন্নয়ন: প্রধানমন্ত্রী

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশাল ব্যবস্থাকে দ্বিতীয় বিপ্লব আখ্যায়িত করে তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন দেশের উন্নয়ন। বাকশাল গঠনের পর তিনি পরিকল্পনা মতো পাঁচ বছর কাজ করতে পারলে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারত।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আনা সাধারণ প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন জাতির জনকের কন্যা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্রকে সুসংহত করা, শোষিতের গণতন্ত্র কায়েম করা, গণতন্ত্রকে বিকেন্দ্রীকরণ করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা- এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। এই স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করা, এটাই আমাদের লক্ষ্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে।’

আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর বাকশাল করার পটভূমি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দেশের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচির ঘোষণা দেন। তার লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে দ্রুত কীভাবে উন্নতি করবেন। বাংলাদেশের আর্থসামজিক উন্নয়ন ছিল তার উদ্দেশ্য।’

তিনি বলেন, ‘দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করা, দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন করা এটাই ছিল তার লক্ষ্য। এবং সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য তিনি যে কাজগুলো করে গিয়েছিলেন সেটার সমালোচনা এমনভাবে শুরু হয়ে গেল, দুর্ভাগ্য যে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আর এই হত্যা করার ফলে এই কাজ তিনি সস্পূর্ণ করে যেতে পারলেন না। কিন্তু তিনি করতে চেয়েছিলেন সেটাই বড় কথা।’

১৯৭৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু জরুরি অবস্থা জারি করেন। আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত করে গঠন করেন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ বা বাকশাল। তখন এটি আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় আওয়ামী পার্টি (মোজাফফর) এবং জাতীয় লীগ নিয়ে গঠিত একটি রাজনৈতিক ফ্রন্ট ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীবলে বহুদলীয় সংসদীয় সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। দেশের সব রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে বাকশাল নামক এই এক রাজনৈতিক দল গঠন করা হয়।

১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলে বাকশালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৮ সালে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের উদ্যোগ নিলে আওয়ামী লীগ আবার কার্যক্রম শুরু করে। তবে বাকশাল নামেও একটি রাজনৈতিক দল কাজ চালিয়ে যায়, পরে আওয়ামী লীগে একীভূত হয় সেটি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবে সংসদ সদস্যরা বাকশাল প্রসঙ্গ না তোলার পর জাতির জনকের কন্যা বলেন, ‘আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য অনেক বিষয় বলেছেন। তবে এই বিষয়টা কিন্তু খুব ভালোভাবে আসেনি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করেছেন, এটা করেছেন, ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছেন, নানা ধরনের কথা বলেছে। আজকে আমি সেই বিষয়ে কিছু বক্তব্য রাখতে চাই। জাতির পিতা বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন করে সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেই তিনি দ্রুত জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র যখন তার এই যাত্রা পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করল এবং দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে এ দেশের মানুষকে হত্যা করল। রাতের আঁধারে গণপরিষদ সদস্য ও নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হত্যা করা শুরু করল। এমনকি ঈদের নামাজে পর্যন্ত সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হলো। হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীকে হত্যা করা, পাটের গুদামে আগুন দেয়া, থানা লুট করা, আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টি তৈরি হয়। নানা ধরনের ঘটনা যখন ঘটতে থাকে তখন তিনি এই দ্বিতীয় বিল্পবের কর্মসূচি ঘোষণা দেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের প্রথম যে সভাটা হয়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভা সেই সভায় তিনি কতগুলো কথা বলেছিলেন।’

বঙ্গবন্ধুর ৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত নাই। একটা লোককে আপনি ভিক্ষা দেন- এক টাকা অথবা আট আনা পয়সা। একটা জাতি যখন ভিক্ষুক হয় মানুষের কাছে হাত পাতে, আমাকে খাবার দাও, আমাকে টাকা দাও- সেই জাতির ইজ্জত থাকে না। আমি সেই ভিক্ষুক জাতির নেতা থাকতে চাই না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ সম্মান নিয়ে চলুক- সেটাই তিনি চেয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, আঘাত করতে চাই এই ঘুনে ধরা সমাজ ব্যবস্থাকে। আমি আপনাদের সমর্থন চাই। আমি জানি আপনাদের সমর্থন আছে। একটা কথা এই যে নতুন সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি আমি। গ্রামে গ্রামে বহুমুখি কোঅপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন না। আমি আপনাদের জমি নেব না। পাঁচ বছরের প্লান। এই বাংলাদেশ ৬৫ হাজার গ্রামে কোঅপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে এই কোঅপারেটিভে জমির মালিকের জমি থাকবে। যে বেকার, প্রত্যেকটি মানুষ কাজ করতে পারে তাকে কোঅপারেটিভের সদস্য হতে হবে। এইগুলো বহুমুখি কোঅপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে। ফার্টিলাইজার যাবে তাদের কাছে। টেস্ট রিলিফ যাবে তাদের কাছে।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button