আন্তর্জাতিক

বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারছেন না ধনাঢ্যরা

সামান্য অসুখবিসুখে উন্নত দেশে চিকিৎসার জন্য পাড়ি জমান ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি সে পট বদলে দিয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ রেখেছে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ। ফলে চিকিৎসার জন্য যারা পুরোপুরি বিদেশনির্ভর ছিলেন, আজ বাধ্য হয়েই স্থানীয় চিকিৎসা নিচ্ছে। খবর আলজাজিরা’র।

নিজ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি না করে যে অভিজাতরা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নিতেন, করোনা মহামারি তাদের দাঁড় করিয়েছে এক কঠিন বাস্তবতার সামনে।

অনেক দেশের চিত্র এটি। জিম্বাবুয়ের কথাই ধরুন, ছয় মাসে করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন দেশটির চার মন্ত্রী।

বৈশ্বিক মহামারিতে লকডাউনের মধ্যে গত জুলাইয়ে মারা যান জিম্বাবুয়ের কৃষিমন্ত্রী পেরান্স শিরি। এরপর প্রাণ হারিয়েছেন আরো কয়েক ধনাঢ্য ব্যক্তি। তবে গত কয়েক সপ্তাহে যেন হঠাৎ করেই মড়ক শুরু হয়েছে অভিজাতদের মধ্যে।

সম্প্রতি মারা গেছেন দেশটির পরিবহনমন্ত্রী জোয়েল বিজি মাটিজা ও ম্যানিক্যাল্যান্ডের প্রাদেশিক বিষয় ও বিকেন্দ্রীকরণ মন্ত্রী এলেন গোয়ারাজিম্বা।

সবশেষ এ তালিকায় যোগ হয়েছেন পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী সিবুবিসো মোয়ো। ৬১ বছর বয়সী এ নেতা ২০১৭ সালের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২০ জানুয়ারি হারারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন তিনি।

করোনাপূর্ব সময়ে এমন ক্ষমতাধর নেতারা সাধারণত চিকিৎসার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা বা চীনের মতো দেশগুলোয় যেতেন। কিন্তু কড়া বিধিনিষেধের কারণে আন্তর্জাতিক ভ্রমণ বন্ধ থাকায় বর্তমানে নিজ দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদের।

বিশ্লেষক ভিভিড গেদে বলেন, জিম্বাবুয়ের রাজনৈতিক অভিজাতরা স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবার মুখোমুখি হতে বাধ্য হয়েছেন, যে ব্যবস্থা বহু বছর আগেই ভেঙে পড়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট মুগাবে তার কয়েক দশকের শাসনামলে চিকিৎসার জন্য নিয়মিত বিদেশে যেতেন, বিশেষ করে সিঙ্গাপুরে। ২০১৯ সালে সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

মুগাবে একা নন, একই কাজ করছেন আরও অনেকে। ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও তৎকালীন ভাইস-প্রেসিডেন্ট এমারসন মানানগাগওয়া একটি সমাবেশের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে খাদ্যে বিষক্রিয়া সন্দেহে চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত বিমানে করে দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে যাওয়া হয়।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট অফিসের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছিলেন, বর্তমান ভাইস-প্রেসিডেন্ট কনস্টান্টিনো চিওয়েঙ্গা চিকিৎসার জন্য চীনে গেছেন।

গত আগস্টে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া চিওয়েঙ্গা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তাদের সরকার জিম্বাবুইয়ানদের চিকিৎসার জন্য বিদেশভ্রমণ নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে। তার মতে, এটি দেশের অর্থভাণ্ডার শুষে নিচ্ছে।

জিম্বাবুয়েতে করোনায় মারা যাওয়া অভিজাতদের মধ্যে আরো রয়েছেন সাবেক উপ-অর্থমন্ত্রী মর্টন মালিয়াঙ্গা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আয়েনেস চিগওয়েডিয়ার, সাবেক কারা কমিশনার প্যারাজাই জিমোন্ডি প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button