অর্থনীতি

বেক্সিমকোর পিপিই পার্ক, পণ্য কিনবে যুক্তরাষ্ট্র

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রাথমিক ও ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই) উৎপাদন কেন্দ্র নিজ দেশে তৈরি করল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো লিমিটেড। দক্ষিণ এশিয়ায় এটিই প্রথম এ ধরনের পার্ক বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকায় পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। পার্কটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক- দুই বাজারে পণ্য সরবরাহ করবে।

বেক্সিমকো গ্রুপ এরই মধ্যে তাদের নতুন উদ্যোগে বেক্সিমকো স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের কাছে মাস্ক ও প্রতিরক্ষামূলক গাউনসহ পিপিই সরবরাহের চুক্তি করেছে। এখান থেকে বছরে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পণ্য রপ্তানির আশা করছেন উদ্যোক্তারা।

এখানে কাঁচামাল থেকে নানা ওজনের লেমিনেটেড ফেব্রিকস ও মেল্টব্লোন পদার্থ তৈরি হবে। এগুলো দিয়ে তৈরি করা হবে জীবাণুমুক্ত ডিসপজেবল আইসোলেশন ও সার্জিক্যাল গাউন, পুনর্ব্যবহারযোগ্য আইসোলেশন গাউন, এন-৯৫ ক্যাপ টাইপ ও ফোল্ডেবল টাইপ মাস্ক, সার্জিক্যাল মাস্ক, ডিসপজেবল স্ক্রাবস, উভেন ও কিটেন সু কভার এবং হেড কভার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পানিরোধী স্ক্রাবস।

আজ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এটি উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রীর বেসামরিক শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ভিডিও কনফারেন্সে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

প্রায় ২৫ একর এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে পার্কটি। বাড়তি চাপ সামলাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সুযোগও রাখা হয়েছে।করোনা মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে পিপিই-সংকট দেখা যাওয়ার পর এই সুরক্ষা সামগ্রীর উৎপাদনে মনোযোগ দেয় বেক্সিমকো। বিপুল পরিমাণ পিপিই রপ্তানি করে তারা ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।

এ ঘটনায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার দরে হয় উল্লম্ফন। ২০ টাকার ঘরে লেনদেন হতে থাকা শেয়ারের দর পৌঁছে ৯০ টাকার ঘরে। পরে কিছুটা কমলেও এখনও তা ৮০ টাকার আশপাশে লেনদেন হচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও স্থাপত্যের সংমিশ্রণে মাত্র ছয় মাসে উৎপাদনক্ষম করে গড়ে তোলা হয় এটি।

পুরো কারখানাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এখানে জীবাণুমুক্ত গাউন তৈরির জন্য একটি আলাদা ইটিও স্টেরালাইজেশন সুবিধার কক্ষ রয়েছে।

বেক্সিমকো ও পণ্যের মান নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ইন্টারটেকের যৌথ উদ্যোগে পার্কে ১২ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে একটি সর্বাধুনিক ‘পিপিই সেন্টার অব এক্সিলেন্স ল্যাব’ও স্থাপন করা হয়েছে।

বেক্সিমকোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ল্যাবে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের মানদণ্ড অনুসারে পিপিই তৈরির সব ধরনের পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশ পোশাকশিল্পের পাশাপাশি নতুন শিল্পে প্রবেশ করল। এমন বৈচিত্র্যের জন্য আমি বাংলাদেশ ও বেক্সিমকোকে সাধুবাদ জানাই।’ বেক্সিমকোর এই প্লান্টটি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী এবং ক্রমবর্ধমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে আরও শক্তিশালী করবে বলেও আশাবাদী তিনি।

মিলার বলেন, ‘আমরা উভয় জাতিই দেশের উন্নয়নে বাণিজ্য ও স্বাধীন উদ্যোগের মূল্য সম্পর্কে সাধারণ কিছু দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করি। বেক্সিমকো এই মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে।’

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বেক্সিমকো অবিচ্ছিন্নভাবে অবদান রেখে চলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সময় আমরা শুরু থেকেই কাজ করেছি। আমি ঔষধ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি যে তারা আমাদের সব সময় সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ করোনার সময় রেমডিসিভির ২০টি দেশে রপ্তানি করেছে।’

বেক্সিমকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস নাভেদ হুসাইন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, ‘আমি এই নতুন সূচনার জন্য আনন্দিত। কেননা, এটি বাংলাদেশকে বিশ্বের পিপিই উৎপাদন মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে।’

এই উৎপাদনকেন্দ্রটি একাধারে উৎপাদক, ক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা, বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও সরকারকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে সক্ষম হবে বলেও আশাবাদী নাভেদ হুসাইন। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশকে বিশ্বের বৃহত্তম পিপিই উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এটি সেই লক্ষ্যকে দৃশ্যমান করছে।’

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ইন্টারটেকের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সন্দ্বীপ দাস, উত্তর আমেরিকার গ্লোবাল সফটলাইন্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রক করোনা, উত্তর আমেরিকার পিপিই কারিগরি প্রধান জ্যাশন অ্যালেন ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button