ঐতিহ্য

ভোলার ঐতিহ্য

ভোলা বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ। এখানকার সংস্কৃতিতে রয়েছে মিশ্র প্রভাব।

জেলার মেঘনা তেতুলিয়ার তীর ঘেষে রয়েছে ছোট জেলে পল্লী। মাছ ধরা মৌসুমে পল্লীর নারী ও শিশু কিশোররা পালাগান গেয়ে রং বেরংয়ের সুতা দিয়ে জাল বোনে। বিশাল এলাকাজুড়ে এসব জাল টানানো হয়। তখন বাড়িতে বাড়িতে চলে উৎসব।

এখানে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলেও অনেক জমিদার বাড়ি সগৌরবে দাড়িয়ে আছে। যেমন মানিকা মিয়া বাড়ি, কুতুবা মিয়া বাড়ি, দেউলা তালুকদার বাড়ি, পরান তালুকদার বাড়ি, রজনী করের বাড়ি ইত্যাদি। এর মধ্যে দৌলতখানের জমিদার কালা রায়ের বাড়ি ছিল বিখ্যাত। তার প্রাসাদে হতো বাইজী ও ক্লাসিকাল ঢঙের ওস্তাদদের গান। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে এ বাড়ি।

এখানে রয়েছে জাগ্রত মাজার, যা হযরত উজির চান করনীর মাজার নামে পরিচিত।

ভোলার ঘুইঙ্গার হাটের মিষ্টি ও ঘোষের দধির সুনাম দীর্ঘকাল ধরে। অতিথি আপ্যায়নে ভোলাবাসীর প্রথম পছন্দ এ দধি ও মিষ্টি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এ মিষ্টান্নে কদর রয়েছে।

ভোলায় এককালে লবণ তৈরি হতো। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি খাল দিয়ে জেলায় প্রবেশ করলে লবণাক্ত পানি আটকে আগুনে জ্বাল দিয়ে লবণ তৈরি করা হতো। অধিকাংশ লবণ তখন তজুমদ্দিন ও মির্জাকালুতে বিক্রি হতো। ব্রিটিশ সরকার লবণ কর বৃদ্ধি ও নানা বিধি-নিষেধ আরাপ করায় ১৯৩০ সালে ভোলায় লবণ আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৩০ সালের পয়লা বৈশাখ পুলিশের গুলিতে দুই ব্যক্তি মারা যায়। পরে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলেও সে স্মৃতি আজো অম্লান।

ভোলা গ্যাসসমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত। শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে ১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে।

ভোলা মহিষের বাথানের জন্য বিখ্যাত। বিভিন্ন চরে অর্ধশতাধিক মহিষের বাথান রয়েছে। এসব বাথান থেকে প্রতিদিন শত শত কেজি দুধ উৎপাদিত হয়। এ দুধ দিয়ে তৈরি হয় বিখ্যাত মহিষের দধি, পনির ও ঘি।

ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা ছিল পর্তুগীজ দস্যুদের দখলে। পরে এখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন বসতি স্থাপন করে। এখানে কান লম্বা, কেশর ভরা বিখ্যাত জাতের কুকুর ছিল। এখন বিলুপ্ত প্রায়। এখানে পর্তুগীজের তৈরি করা প্যাগোডার ধ্বংসাবশেষ রয়ে গেছে।

গ্রামাঞ্চলে দাড়িয়াপাল্লা, ফুটবল, কাবাডি, হাডুডু খেলার প্রচলন ছিল। এখনও এসব খেলা হয়।

ভোলার কলঘাট এলাকায় একসময় স্টিমার ঘাট ছিল। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন এটি শুধুই স্মৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button