প্রধান প্রতিবেদন

মহীসোপানের মালিকানা দাবি বাংলাদেশের, জাতিসংঘে আপত্তি ভারতের

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের মহীসোপানের দাবির বিষয়ে জাতিসংঘে আপত্তি তুলেছে ভারত। সমুদ্রপৃষ্ঠের যে বেসলাইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, তা ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ। তাই ভারত জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণবিষয়ক কমিশনে বাংলাদেশের দাবিকে বিবেচনায় না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।

শুক্রবার জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণসংক্রান্ত কমিশনে (সিএলসিএস) ভারত এই আপত্তি জানায়।

ভারতের আগে এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের দাবির বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মিয়ানমার। কিন্তু ভারতের মতো বাংলাদেশের দাবির প্রতি আপত্তি জানায়নি দেশটি। বাংলাদেশ আইনগতভাবে মহীসোপানের যতটা প্রাপ্য, তা থেকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করছে দুই প্রতিবেশী দেশ। দুই নিকট প্রতিবেশীর বিরোধিতার কারণে বাংলাদেশের মহীসোপানের বিষয়টির এখনো সুরাহা হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে জাতিসংঘের কাছে মহীসোপানের দাবির বিষয়ে বাংলাদেশ আবেদন জানায়। গত বছরের অক্টোবরে ওই দাবির বিষয়ে সংশোধনী জমা দেয় বাংলাদেশ।

গত শুক্রবার জাতিসংঘের সিএলসিএস ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ভারতের আপত্তিপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের যে বেসলাইনের ওপর ভিত্তি করে মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, সেটির মাধ্যমে ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ দাবি করছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে যে ‘গ্রে এরিয়া’ রয়েছে, সেটির বিষয়ে বাংলাদেশ কোনো তথ্য দেয়নি। ‘গ্রে এরিয়া’ হচ্ছে বঙ্গোপসাগরে একটি ছোট অংশ, যেখানে পানির মধ্যে যে সম্পদ রয়েছে, যেমন মাছ, সেটির মালিক ভারত; কিন্তু মাটির নিচে যে খনিজ পদার্থ আছে, সেটির মালিক বাংলাদেশ। এই অংশের পরিমাণ প্রায় ৯০০ বর্গকিলোমিটার।

বাংলাদেশের মহীসোপানের বিষয়ে ভারতের আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম শনিবার সন্ধ্যায় সময় পূর্বাপরকে বলেন, ‘ভারত সিএলসিএসে আমাদের মহীসোপানের দাবির বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। তাদের যুক্তিগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিশনে নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরব।’

বাংলাদেশের বেসলাইন নিয়ে ভারত যে আপত্তি তুলেছে, তা নিয়ে জানতে চাইলে মো. খুরশেদ আলম বলেন, বাংলাদেশ সমুদ্রসংক্রান্ত আইন অনুসরণ করেই নিজ ভূখণ্ডের বেসলাইন নির্ধারণ করেছে। এই বেসলাইন-সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলাদেশ জাতিসংঘে জমা দিয়েছে। বঙ্গোপসাগরে দুই দেশের মাঝে থাকা ‘গ্রে এরিয়া’ নিয়ে বাংলাদেশ তথ্য দেয়নি, ভারতের এমন দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ‘গ্রে এরিয়া’ হিসেবে অভিহিত অংশটি বঙ্গোপসাগরের ওয়াটার কলামের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর সঙ্গে মহীসোপানের দাবির কোনো সম্পর্ক নেই। স্বাভাবিকভাবেই এটি মহীসোপানের দাবি বিবেচনার সময় প্রযোজ্য হবে না।

গত এক দশকের বেশি সময়জুড়ে বাংলাদেশের সমুদ্রের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা মো. খুরশেদ আলম বলেন, ভারত যে বেসলাইনের ভিত্তিতে মহীসোপানের দাবি করেছে, সেটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ২০০৯ সালে আপত্তি জানিয়েছিল। বাংলাদেশের ওই দাবি এখনো বলবৎ আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button