রাজধানীতে বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা অপসারণ বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে সংকটে পড়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। নতুন ব্যবস্থায় চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ময়লা সংগ্রহকারীরা কাজ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে।
রাজধানীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন পালন করলেও তারা শুধু সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন থেকে বর্জ্য নিয়ে তা ল্যান্ডফিলে বহনের দায়িত্ব পালন করে। বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা বয়ে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার কাজটি বেসরকারি ময়লা শ্রমিকেরা করে থাকে। সিটি করপোরেশনের কোনো তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ নেই এ ক্ষেত্রে। স্থানীয় নানা প্রভাবশালী চক্র এটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এত দিন বিশৃঙ্খলভাবে চলছিল। কোথাও ৫০ কোথাও ১০০ টাকা কী তারও বেশি টাকা নেয়া হতো এক একটি বাসাবাড়ি থেকে।
তা ডিএসসিসি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে নতুন ব্যবস্থা নিয়েছে। এ কাজ তদারকিতে থাকবে সিটি করপোরেশন।
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর বদরুল আমিন বলেন, ‘নতুন মেয়র হিসেবে শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছিলেন। সেটার ধারাবাহিকতায় আমরা জাতীয় পত্রিকা, টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়েছি, প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে এক জন এই ময়লা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে পারবেন। বেঁধে দেয়া ২৬টি শর্ত মেনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে। আগে সিটি করপোরেশন এটা নিয়ে মাথা ঘামায়নি। এখন সেটি নজরদারি করে।’ এখন পর্যন্ত ৭১টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন কোম্পানিকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
নতুন এ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বদরুল আমিন বলেন, ‘ময়লা পরিবহনে ভ্যান, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পোশাক, গ্লাভস বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও নির্দিষ্ট বেতন-ভাতা এগুলোর ওপর এখন সিটি করপোরেশনের নজরদারি তৈরি হয়েছে।’
আগে কে টাকা নিচ্ছে, কত নিচ্ছে এসব নিয়ে ঝামেলা ছিল। এখন বাসাবাড়ি থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা আর দোকানপাট থেকে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নিতে পারবে তারা।
তবে এই নতুন ব্যবস্থার বিরোধিতা করছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডার (পিডব্লিউসিএসপি)।
গতকাল মঙ্গলবার প্রেসক্লাবের সামনে এ সংগঠন কাফনের কাপড় পরে সমাবেশ করে। নতুন ব্যবস্থা বাতিল করে আগামী সাত দিনের মধ্যে বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠনকে অনুমোদন ও প্রত্যয়ন দেয়ার অনুমতি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন নেতারা। না হলে রাজধানী ঢাকার বাসাবাড়ির ময়লা নেয়া বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তারা।
তারা বলছেন, নতুন ব্যবস্থায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
মানববন্ধনে সংগঠনের সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের যে জনবল রয়েছে তা দিয়ে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাদের প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারের (পিডব্লিউসিএসপি) প্রায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের কনটেইনারে পৌঁছে দেয়। এ জন্য শুধু সেবামূল্য হিসেবে আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে নিতাম। যা দিয়ে কর্মীদের বেতন-ভাতা, অফিস ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হতো।’
তিনি অভিযোগ করেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের না জানিয়ে ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দিয়ে দিয়েছে। এতে দক্ষিণ সিটিতে তাদের ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী বেকার হয়েছে।
নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা, এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ময়লা সংগ্রহের এই সেবামূলক পুরো কাজ এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। টেন্ডারে দেয়ার কারণে দক্ষিণ সিটিতে নাগরিকদের হয়রানি আরও বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ময়লার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাধর কাউন্সিলর বা ঠিকাদারদের লোকজন সেই ১০০ টাকার পরিবর্তে কোথাও কোথাও ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।
তবে নতুন ব্যবস্থায় আগের থেকে ভালো হয়েছে, অভিযোগও কম আসছে বলে জানান ওয়ার্ড কাউন্সিলরা।
দক্ষিণ সিটির অন্তর্ভুক্ত ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মামুন রশিদ বলেন, ‘এখন একটা চেইন সিস্টেম হয়েছে। জানা যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে কী হচ্ছে। ফি নির্ধারিত হওয়ায় গন্ডগোলের সুযোগ কম।’