করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারত থেকে আনা টিকা প্রথম নেবেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার বেলা ৩টায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে টিকা কার্যক্রম উদ্বোধনের পরপরই করোনা টিকা নেবেন রুনু।
রুনুর পর আরও দুই নার্সকে টিকা দেয়া হবে। একইসঙ্গে এদিন টিকা নেবেন তিন চিকিৎসক।
তালিকা অনুযায়ী প্রথমে টিকা নেবেন ডায়ালাইসিস ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু বেরুনিকা কস্তা। এর পরে ফিমেল মেডিসিন ইউনিটের ইনচার্জ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নি খাতুন। পরে একই ইউনিটে কর্মরত নার্স রিনা সরকার টিকা পাবেন। তবে শেষ মুহূর্তে কারো কোনো শারীরিক অসুবিধা দেখা দিলে তালিকায় রদবদল হতে পারে।
এই হাসপাতালে চিকিৎসকদের মধ্যে টিকা নেয়ার তালিকার প্রথমে রয়েছেন কনসালট্যান্ট লুৎফর কবির মবিন ও শাহরিয়ার আলম। আরেক চিকিৎসকের নাম এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বুধবার টিকা প্রয়োগের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনাভাইরাসের প্রথম টিকা নিচ্ছেন ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী। তিনি টিকা পাচ্ছেন বৃহস্পতিবার।
ডা. ফরহাদ বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হবে বলে নিশ্চিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত টিকা নেয়ার তালিকায় আমিই প্রথমে আছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আমিই ঢামেকে সবার আগে টিকা নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘টিকা গ্রহণ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মূলত এটা দূর করার জন্য যারা চিকিৎসক-নার্সসহ ফ্রন্টলাইনার রয়েছেন, তারা প্রথম টিকা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের এই উদ্যোগটা মূলত সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্যই। এটা সাকসেসফুল হলে আশা করি সারা দেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে এই টিকা গ্রহণ করবে।’
টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানান তিনি।
ডা. ফরহাদ বলেন, ডিসেম্বরের প্রথম থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে। শুরু থেকে সবার মধ্যেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে একটু আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং ব্যাপক আকারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা কাটতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে ব্যাপক হারে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলে এটা কেটে যাবে; এটাই স্বাভাবিক।
‘বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এই টিকা নেয়ার পরও যখন খুব বেশি সমস্যা দেখা দেয়নি, তখনই জনমনে আতঙ্ক শেষ হয়ে গেছে। আমাদের দেশে হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নেয়া শুরু করলে উৎকণ্ঠা কেটে যাবে।’
তার পরিবারও প্রথম দিকে টিকা পাচ্ছে কি না, সে প্রসঙ্গে ডা. ফরহাদ বলেন, ‘আমার স্ত্রী ডাক্তার, তার শিডিউলটা এখনও আসেনি, আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ে হয়তো উনি পেতে পারেন, তালিকা পেতে একটু দেরি হতে পারে।’
সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার টিকা নিয়ে সমালোচনার জবাবে তিনি জানান, বিভিন্ন দেশের ৬০ শতাংশ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে যেসব টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে, তার অধিকাংশ সেরামে উৎপাদিত টিকার মাধ্যমে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘যেসব চিকিৎসক করোনা মোকাবিলায় প্রথম সারিতে কাজ করেছেন তাদের তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এমন এক হাজার ডাক্তারের তালিকা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমে ১০০ জনের তালিকা ধরে টিকা দেয়া হবে। আমাকে মোবাইলে বিষয়টি জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’
ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত। একই সঙ্গে ঢামেকের মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশন রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবেও সেবা দিচ্ছেন। তিনি সিলেট মেডিক্যাল কলেজের ৪১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ডা. ফরহাদের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার করোনা টিকা কার্যক্রম শুরুর সব প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা দেয়া শুরু হবে।
প্রথমে চিকিংসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেয়া হবে। এ ছাড়া হাসপাতালের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসারদের দেয়া হবে ধারাবাহিকভাবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আন্ডারগ্রাউন্ডে টিকা দেয়ার স্থান নির্ধারণ করেছে কর্তৃপক্ষ। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, টিকা দেয়ার সময় নার্স, স্বেচ্ছাসেবী ও চিকিৎসকরা উপস্থিত থাকবেন। টিকা দেয়ার পরে ওই ব্যক্তিকে ৩০ মিনিট পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।