রূপলাল হাউজ ঔপনিবেশিক আমলে প্রবর্তিত পরবর্তী রেঁনেসা যুগের ইউরোপীয় স্থাপত্যের এক চমৎকার উদাহরণ। ১৮২৫ সালে আর্মেনিয়ান জমিদার আরাতুন পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে ভবনটি নির্মাণ করেন। ১৮৩৫ সালে দুই সহোদর রূপলাল দাস ও রঘুনাথ দাস বাড়িটি কেনেন। রূপলাল বাড়িটি কলকাতার মার্টিন অ্যান্ড কোং দিয়ে পুনঃনির্মাণ করেন। তখন এর নামকরণ করেন রূপলাল হাউজ।
তৎকালীন ঢাকার কোনো বাড়িতে রূপলাল হাউজের মতো বিলাসবহুল স্থাপত্যশৈলী ছিলো না। আর্মেনিয়ান, ব্রিটিশ ও ঢাকার ক্লাসিক চেহারা মিলিয়ে বাড়িটি ছিল মনোমুগ্ধকর। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরের বাড়িটি দেখে ইউরোপিয়ানরা মুগ্ধ হতো। হাউজের অন্যতম আকর্ষণ ছিল, বাড়ির উপরে মাঝখানে বসানো একটা প্রকান্ড ঘড়ি, যা ঢাকার সম্মুখভাগের সব নদী বা খাল থেকে দেখা যেত। মাঝি ও নৌকারোহীরা এ ঘড়ি দেখে সময় নির্ধারণ করতেন।
বাড়ির সৌন্দর্য, সংস্কৃতি ও রূপলাল দাসের প্রতাপের কারণে বিদেশীরা বেড়াতে এলে এখানে উঠতেন। একসময় রূপলাল হাউজ থেকে ‘শাস্তি’নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হতো।
রূপলাল হাউজ সম্পূর্ণ ভিন্ন স্থাপত্যরীতির দুটি অসমান বস্তুকে বিভক্ত করা একটি দ্বিতল প্রাসাদ। প্রায় ৯১.৪৪ মিটার দীর্ঘ। ভবনটি ইংরেজী “ই”আকৃতিতে তৈরি। তখনকার দিনে আহসান মঞ্জিলের পাশাপাশি শুধু রূপলাল হাউজে বল নাচের উপযোগী জলসাঘর ছিল। এখানে নিয়মিত সঙ্গীতের আসর বসত। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান, ওস্তাদ ওয়ালী উল্লাহ খান ও লক্ষী দেবীসহ অনেক বিখ্যাত শিল্পী এ আসরে নিয়মিত আসতেন।
বিশ শতকের প্রথম দশক থেকে রূপলাল হাউজের জৌলুস কমতে থাকে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় রূপলালের উত্তরাধিকারীরা কলকাতায় চলে যান। তখন থেকে এ হাউজের ইতিহাসে ধুলো জমতে থাকে। ১৯৫৮ সালে মোহম্মদ সিদ্দিক জামাল নামের এক ব্যক্তি হাউজটি কিনে এর নাম দেন ‘জামাল হাউজ’।
বর্তমানে বাড়িটির অস্তিত্ব নেই বললে চলে। অবহেলা-অনাদরে এতটাই শ্রীহীন যে, রূপলাল হাউজকে ঢাকার ইতিহাসের একটি অংশ বলে ঠাওর করা যায় না।
স্থানীয় অধিবাসীদের অনেকে জৌলসপূর্ণ বাড়িটির নামও শুনেননি। এখন একটা বাজার বৈ কিছুই নয় এটা। বাড়িটি ঘিরে মসলা ও সবজি ব্যবসায়ীদের দোকানপাট গড়ে উঠেছে। আশার কথা, প্রত্বতত্ত্ব অধিদপ্তর গত বছর দোকানীদের কবল থেকে রূপলাল হাউজকে উদ্ধার করেছে। তবে এখনো দর্শনার্থীদের জন্য উপযোগী করা হয়নি।