
বাংলাদেশের মানুষ, বাংলা ভাষাভাষী মানুষ, সর্বোপরি বিশ্বের স্বাধীনতাপ্রিয়, শান্তিকামী মানুষের কাছে চলতি বছরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতিহাসের এক আনন্দময় মোহনায় পৌঁছেছি। বিষয়টি গৌরব এবং আত্মশ্লাঘারও বটে। শুরু হয়েছিল বাঙালির মাতৃভাষার দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন দিয়ে। এরপর সেই আন্দোলনে যোগ হলো আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের দাবি। বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশধারায় সেই আন্দোলন পৌঁছাল মুক্তিযুদ্ধে।
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশের এক নিভৃত গ্রামে জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমান হলেন বঙ্গবন্ধু। শোষিত, বঞ্চিত, অধিকারহারা বাঙালির অনিবার্য ত্রাতা। এ মহান নেতার অপরিসীম ত্যাগ, আপসহীন আন্দোলন-সংগ্রাম এবং দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হলো স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। চলতি বছর আমরা উদযাপন করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।
১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের উত্তাল জনসমুদ্রে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছিলেন। কার্যত এ ভাষণই ছিল বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা। এ বছর আমরা সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছি।
বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক চেষ্টা ও উদ্যোগ অবজ্ঞা করে পাকিস্তানের জান্তা সরকার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাতে নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের পাশবিকতায় মেতে উঠেছিল। সেই রাতের শেষ দিকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। চলতি বছর আমাদের অমূল্য স্বাধীনতা ঘোষণার পঞ্চাশ বছর। ব্যাপক ও বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বছরটি পালিত হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে যাঁদের রক্তমূল্যে দেশ পেয়েছি, সেই শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিমেয় শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। জাতির কৃতজ্ঞতা, যাদের সীমাহীন ত্যাগ ও সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধে বিজয় লাভ ত্বরান্বিত হয়েছিল।
অনেক প্রতিকূলতা, বৈরীকাল ও বিরুদ্ধ স্রোত অতিক্রম করে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের অনেক সাফল্য আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সফল হোক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক, সবার মঙ্গল ও কল্যাণ হোক।