
বরগুনা উপজেলা পরিষদ এলাকার সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস কার্যালয় থেকে রোববার দুপুরে কম্পিউটার সামগ্রী ডেলিভারি নিতে আসেন মনিরুজ্জামান। কুরিয়ার থেকে বুঝে পেয়ে সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একজন রিকশা চালককে ডেকে বাক্স তোলেন। রিকশাচালককে মালামাল দিয়ে বরগুনা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার দিকে নিয়ে যেতে বলেন তিনি। নিজেও রওয়ানা দেন মোটরসাইকেলে চেপে।
প্রেসক্লাবের সামনে পৌঁছতেই একজন তরুণ হঠাৎ বাইকের কাছ ঘেঁষে দাঁড়ান। ওই তরুণের দাবি, তার শরীরে বাইকের ধাক্কা লেগেছে। এ নিয়ে মিনিটখানেক তর্ক হয়। এ সুযোগে রিকশাচালক উধাও। শহরের অলিগলি কোথাও খুঁজতে বাদ রাখেননি মনির। কিন্তু সন্ধান মেলেনি।
দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) বরগুনার জেলা শাখার প্রকল্প ব্যবস্থাপক মনির জানান, বরগুনা অফিসের জন্য ঢাকা থেকে ৫৭ হাজার ৯০০ টাকায় কম্পিউটার সামগ্রী কিনে সুন্দরবন কুরিয়ারে পাঠানো হয়েছিল। চোরচক্র কম্পিউটার নিয়ে চম্পট দেয়ায় পড়েছেন মহাবিপাকে।
একই দিন পণ্য খোয়া গেছে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি মো. আলীমের। সকাল ১০টার দিকে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার ওষুধ ডেলিভারি নিতে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যালয়ে আসেন।
ঠিক একই প্রক্রিয়ায় বরগুনা পৌরসভার সামনে পৌঁছতেই বাইকে ধাক্কা লেগেছে দাবি করে এক ব্যক্তি তর্ক করার চেষ্টা করেন। বিরোধ এড়িয়ে এগিয়ে যান আলীম। পৌর মার্কেটের কাছে পৌঁছতে আবারও এক ব্যক্তি বাইকে ধাক্কা লেগেছে দাবি করে করে তর্ক জুড়ে দেন। এ সুযোগে রিকশাচালক চম্পট।
ব্যতিক্রম নয়, প্রায়ই ঘটে একই ধরনের ঘটনা। সুযোগ বুঝে কুরিয়ারের পার্সেল ডেলিভারি নিতে আসা গ্রাহকদের বোকা বানিয়ে পার্সেল নিয়ে উধাও হয় একটি চক্র।
মনিরের কম্পিউটার সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ফুটেজটি সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস বরগুনা কার্যালয়ের। সিসিটিভি ফুটেজে খাকি রংয়ের ফুলপ্যান্ট ও লাল সাদা কলারওয়ালা টিশার্ট পরিহিত একজনকে রিকশায় বসে থাকতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরে সেখানে চার জন তরুণ রিকশাওয়ালার সঙ্গে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করেন।
এর মধ্যে একজনকে সাইকেল ও একটি প্যাকেট নিয়ে রিকশার পেছনে দাঁড়াতে দেখা যায়। অন্য একজন মুঠোফোনে কথা বলছেন। মনিরুজ্জামান এসে ওই রিকশা চালকের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে কুরিয়ারের ভেতরে চলে যান। বাজারের দিকে চলে যায় চার জন তরুণ। রিকশাওয়ালাও কুরিয়ারের ভেতর থেকে মালামাল এনে রিকশা নিয়ে বাজারের দিকে চলে যায়।
এসব প্রতারণা নিয়ে সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস বরগুনা সদর শাখার ব্যবস্থাপক মাসুম মল্লিক বলেন, ‘আমাদের যদি হোম ডেলিভারি থাকে তবে বাসায় পৌঁছে দেই। আর যাদের হোম ডেলিভারি নেই, তারা অফিস থেকে এসে পার্সেল নিয়ে যায়। ডেলিভারি পর বাইরে কী ঘটে এ দায়িত্ব আমাদের নয়। তবে এ ঘটনায় আমরা বিব্রত।’
ঘটনার পর রোববার রাতেই মনিরুজ্জামান ও ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি আলিম বরগুনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘবদ্ধ চোরচক্রটিকে ধরতে পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে, দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’