আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের জন্য স্বাধীন পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
আজ রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের ১০২ আইনজীবীর পক্ষে রিটটি করেন মোহাম্মদ শিশির মনির।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিষয়ে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন ‘পুলিশ অভিযোগ তদন্ত কমিশন’ বা পুলিশ কমপ্লেইন্ট ইনভেস্টিগেশন কমিশন (পিসিআইসি) গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি, অবসরপ্রাপ্ত সচিব, আইনের শিক্ষক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে এ কমিটি গঠনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতামত সংবলিত রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে দাখিল করবে এ কমিটি।
রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির জানান, রিটটি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।
রিটে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটের বিষয়বস্তু তুলে ধরে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ১৪৫ পৃষ্ঠার রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্তি আকারে ১ হাজার ৫২২ পৃষ্ঠার নথি দেয়া হয়েছে। রিটে আটটি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।
এতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান, পুলিশের গৌরবময় অর্জনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আলোকপাত করা হয়েছে তাদের শৃঙ্খলা বিধানের বর্তমান আইনি কাঠামো সম্পর্কে। পাশাপাশি নানা সময়ে পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ ও অসদাচরণের বিবরণও রয়েছে।
এ বিষয়ে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নানা গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৫৮৯ ঘটনা তুলে ধরা হয়। ঘটনাগুলোর সংবাদ রিট আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘটনাগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, পুলিশ বাহিনীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিচার-বহির্ভূত হত্যা, হেফাজতে মৃত্যু, হেফাজতে নির্যাতন, গুম, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়, খুন, মারধর, হুমকি, হয়রানি, ধর্ষণ, ইভটিজিং ও নারী নির্যাতন; চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও লুটপাট; চাঁদাবাজিসহ ১৮ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
রিটে বলা হয়, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন তদন্ত কমিশনের অভাবকে অপরাধের প্রধান কারণ হিসেবে মনে হচ্ছে।
শিশির মনির বলেন, ‘রিটে দৃষ্টান্ত হিসেবে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে করা ছয়টি মামলার কপি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা চূড়ান্ত রিপোর্ট বা আপসের মাধ্যমে অব্যাহতি বা খালাস পেয়েছেন।’
তিনি উল্লেখ করেন, তদন্ত হলো বিচারের প্রাথমিক ধাপ। ন্যায়বিচারের জন্য প্রধান শর্ত হলো সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত। সুষ্ঠু তদন্ত সংবিধানের ৩৫(৩) ও ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। বর্তমান আইনি কাঠামোতে পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্তভার পুলিশের ওপরই ন্যস্ত। ফলে সে তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ বিষয়ে ২০০৭ সালে ‘পুলিশ অধ্যাদেশ’ নামে একটি আইনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের ৭১ দফায় ‘পুলিশ কমপ্লেইন্ট কমিশন’ গঠনের বিধান প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু সে খসড়া অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হয়নি।
রিটে আটটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও নীতিমালা সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব দলিলে পুলিশের অপরাধ তদন্তে আলাদা কর্তৃপক্ষ/কমিশন গঠনের জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ২৫ দেশে পুলিশের স্বাধীন ও স্বতন্ত্র তদন্ত কমিশন রয়েছে। ২০০৬ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বিখ্যাত ‘প্রকাশ সিং বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’ মামলায় পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য ৭ দফা নির্দেশনা দেয়ার নজিরও যুক্ত করা হয়েছে রিটে।
এর আগে এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তাতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান রিটকারী।