জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার কল সেন্টার “স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩”। এ সেন্টারে যুক্ত হচ্ছে যৌন স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা। এরই অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য বাতায়নের ডাক্তারদের যৌন স্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা সম্পর্কে আরও দক্ষ করে তুলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক সংগঠন আইপাস বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের প্রথম সারির আইসিটি ও অন্যতম বৃহৎ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটির সমন্বয়ে তিন দিনের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে।
সম্প্রতি এ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামের উদ্ভোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান-আরা বানু। বিশেষ অতিথি ছিলেন মা ও শিশু সেবার লাইন ডিরেক্টর (এমসি-আরএএইচ) ডাঃ মোহাম্মাদ শরীফ, এমআইএস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এম আই এস ও ই-হেলথ বিভাগের পরিচালক ডঃ হাবিবুর রাহমান। আরও উপস্থিত ছিলেন আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডাক্তার সৈয়দ রুবাইয়াত, সিনেসিস আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী ও সিনেসিস হেল্থের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
প্রকল্পটির মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও আইপাস বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ শুরু করলো সিনেসিস আইটির সিনেসিস হেল্থ বিভাগ। এ প্রশিক্ষণের আওতায় ৯০ ডাক্তার তিন দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন আইপাস বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র উপদেষ্টা ডাঃ মোহাম্মাদ আবুল খায়ের ও আইপাস বাংলাদেশের উপদেষ্টা ডাঃ সায়েদা খাদিজা আক্তার।
সিনেসিস হেল্থের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিজামউদ্দিন আহমেদ উক্ত অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। তিনি স্বাস্থ্য বাতায়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে গত ২০১৫ সাল থেকে স্বাস্থ্য বাতায়ন দেশের জনগণকে নিরলস সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের পর থেকে এই সেবার বেশ উন্নয়ন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে সেবা গুলো উন্নীত করণে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, তারই ধারাবাহিকতায় আজ পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাথে আমরা যুক্ত হতে পেরে বেশ আনন্দিত। এই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম ভবিষ্যতের পরিবার পরিকল্পনায় আরও বেশি যুগ উপযোগী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের অনুপ্রেরণা যোগাবে”।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান-আরা বানু বলেন, “প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেকেই পরিবার পরিকল্পনা বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। আমার বিশ্বাস স্বাস্থ্য বাতায়নের মাধ্যমে দেশের জনগণকে প্রজনন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন এবং পরামর্শ প্রদান স্বাস্থ্য সেবায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
আইপাস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডাঃ সৈয়দ রুবাইয়াত বলেন, “আইপাস বাংলাদেশ যৌন স্বাস্থ্য এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করে আসছে, আমরা আশা করছি এই উদ্যোগ আমাদের সেই প্রচেষ্টাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে”।
এ ছাড়া মা ও শিশু সেবার লাইন ডিরেক্টর (এমসি-আরএএইচ) ডাঃ মোহাম্মাদ শরীফ বলেন, “দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে অজ্ঞ, এক্ষেত্রে যৌন এবং প্রজনন বিষয়ের পাশাপাশি পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞের সেবা গ্রহণের ব্যবস্থা থাকলে দেশ ও জনগণের অনেক উপকারে আসবে”।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এম আই এস ও ই-হেলথ বিভাগের পরিচালক ডঃ হাবিবুর রাহমান বলেন, “স্বাস্থ্য বাতায়ন ২০১৫ সাল থেকে দেশ ও জনগণকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। সিনেসিস আইটির পরিচালনায় এটি এখন আর কল সেন্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, স্বাস্থ্য বাতায়ন এখন স্বাস্থ্য সেবার ডিজিটাল হাসপাতাল হিসেবে কাজ করছে। করোনা কালীন সময়ে স্বাস্থ্য বাতায়নের বেশ অগ্রগতি হয়েছে। আজকের এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি হল, এই প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম নতুন পথ চলা সেই অগ্রগতিকে আরও প্রসার করবে”।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন সিনেসিস আইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “সিনেসিস আইটি স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করে যাচ্ছে দীর্ঘ ১৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এই পথচলায় প্রায় ১৫০ এর ও অধিক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব ডিজিটাল সেবা নিয়ে কাজ করেছে। আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে বলতে চাই, ই-গভার্নেন্স ও কল সেন্টার সেবার পাশাপাশি সিনেসিস আইটি আজ দেশের সর্ববৃহৎ ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান।”
“সিসেসিস আইটির ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ দেশের স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। স্বাস্থ্য বাতায়নের পাশাপাশি সিসেসিস আইটির ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবার আওতায় দেশের সর্বপ্রথম ও একমাত্র মানসিক স্বাস্থ্য সেবার কল সেন্টার “মাইন্ড টেল”, সেনা স্বাস্থ্য সেবা, ডিজিটাল হেল্থ ৭৮৯, প্রবাস বন্ধু, কোভিড-১৯ টেলি-হেল্থ সেন্টার, মা টেলি-হেল্থ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষায়িত কল সেন্টার উল্লেখযোগ্য। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সঙ্গে নতুন করে এ পথ চলা শুরু করতে পেরে আমরা আনন্দিত, আশা করছি এ প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম আমাদের ডাক্তারদের নতুন করে অনেক কিছু শেখাবে এবং দেশ ও জনগণের সেবায় অনুপ্রেরণা যোগাবে”।