প্রযুক্তি

হুয়াওয়ে এক লাখ তরুণকে ডিজিটাল ক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলবে

বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় আগামী পাঁচ বছরে এক লাখ তরুণকে ডিজিটাল ক্ষেত্রে দক্ষ করে তুলতে সহায়তা করবে হুয়াওয়ে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পখাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কাজ করবে। গতকাল ডিজিটাল ট্যালেন্ট রিজিওনাল সামিটে একথা জানান হুয়াওয়ের মুখপাত্র।

‘কালটিভেটিং অ্যা ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম ফর ইনক্লুসিভ ডিজিটাল প্রোসপারিটি’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ সামিট। এতে ডিজিটাল ক্ষেত্রে দক্ষতার ঘাটতি পূরণ ও মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে কীভাবে ডিজিটাল রূপান্তর প্রভাবিত করা যায় এবং তরুণদের কীভাবে এতে সংযুক্ত করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সামিটে তিন দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, ইউনেস্কো বাংলাদেশ, শিক্ষক, আইসিটি খাতের অভিজ্ঞ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার ও বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন মতামত তুলে ধরেন।

সামিটে হুয়াওয়ে এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে চেন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও স্থায়ী ডিজিটাল ভবিষ্যতের মূলভিত্তি। অনেক দেশ ডিজিটাল মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তির মতো বেশ বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন”।

তিনি আরও বলেন, ‘‘আগামী পাঁচ বছরে হুয়াওয়ে এ অঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশ, শ্রীলংকা ও নেপালে এক লাখেরও বেশি আইসিটি দক্ষতাসম্পন্ন জনশক্তি তৈরি এবং একটি ডিজিটাল ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম নির্মাণ করবে বলে প্রত্যাশা করছে।’’

প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “ডিজিটালাইজেশনের পাশাপাশি ডিজিটাল ট্যালেন্ট তৈরির এখনই সঠিক সময়। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ এ দেশের মাটি ও মানুষ। এর প্রতিফলন এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। করোনা মহামারি সত্ত্বেও উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সব শর্ত পূরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর পেছনে রয়েছে সব ক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার। বাস্তবায়িত হচ্ছে ভিশন ২০২১। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, বেসরকারি খাতের সহায়তায় আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। হুয়াওয়ে দেশের ডিজিটালাইজেশনে ও তরুণ সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে। তাদের সহায়তায় আমাদের তরুণ সমাজ শিল্প বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এই ধরনের অংশীদারিত্ব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় আমাদের তরুণদের প্রস্তুত করবে।”

তিনি ডিজিটাল রূপান্তর সমাজে অভুতপূর্ব পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে তিনি তরুণ সমাজকে দক্ষ করে গড়ে তোলা ও বর্তমান কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি বলে উল্লেখ করেন। সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের ডিজিটাল ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে কাজ করা উচিৎ।

ইভেন্টের প্যানেল আলোচনায় এ অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা অংশ নেন। তারা এ ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেমের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করেন। এক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপকল্পের মধ্যে ট্যালেন্ট বিকাশের সহজতর পন্থাগুলোর ওপর জোর দেয়া হয়।

বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার বলেন, “এ বৈশ্বিক মহামারি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধারাবাহিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে থাকতে হবে। এটা তখনই সম্ভব হবে যদি আমরা আইসিটি খাতে তরুণদের দক্ষ করে গরে তুলতে পারি। এজন্য আইসিটি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে ও বুয়েটের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাওয়া উচিৎ। এ লক্ষ্যে আমরা সরকারের সহযোগিতায় ধারাবাহিকভাবে একসঙ্গে কাজ করে আসছি। আজকের আয়োজনের লক্ষ্য উদ্ভাবনের চাকা সচল রাখা, আর এমন সময়োপযোগী একটি সামিট আয়োজনের জন্য আমি হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ জানাই।

আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরাও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল দক্ষতার ঘাটতি পূরণে গুরুত্বারোপ করেন। হেড অব অফিস ও বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি বিয়াট্রিস কালদুন বলেন, “অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমৃদ্ধির লক্ষ্যে ট্যালেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য, শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে আমাদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি, মূলধারার ডিজিটাল দক্ষতা বিকাশ, এবং ডিজিটাল শিক্ষা বিষয়ক রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হুয়াওয়ে। পাশাপাশি, ইউনেস্কোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে হুয়াওয়ে ‘টেকফরঅল’ উদ্যোগ নিয়ে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য রয়েছে এ পরিকল্পনা বিস্তৃত করার। এটা দীর্ঘমেয়াদী ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ যার লক্ষ্য বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষকে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল দক্ষতায় সমৃদ্ধ করে তোলার মাধ্যমে তাদের ক্ষমতায়ন।”

বৈশ্বিক মহামারিতে হুয়াওয়ে শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীদের ডিজিটাল সমাধানসহ অনলাইন শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহে ইউনেস্কোসহ অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে। হুয়াওয়ে ডিজিটাল ট্যালেন্ট তৈরির নানা উদ্যোগ আরও বিস্তৃত করা ও এন্ড-টু-এন্ড হুয়াওয়ে ট্যালেন্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা করছে, যা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করবে। অনলাইন কোর্স, পরীক্ষা, চাকরি সন্ধান প্রভৃতি সেবা দিয়ে ক্যারিয়ার উন্নয়নে তাদের সহায়তা করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button