প্রকাশিত সংখ্যাম্যাগাজিন

২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষা: সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রস্তুতি

সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট বা এসএসসি ২০২১ সালের প্রিয় পরীক্ষার্থীরা শুভেচ্ছা নিও। এ বছর সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর তোমরা তোমাদের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষাটি দিতে যাচ্ছ। যদিও করোনার ছোবল সবাইকে নাড়া দিয়েছে। তোমাদের পড়ালেখাতেও এর প্রভাব পড়েছে। এক ধরনের বন্দি অবস্থায় তোমাদের লেখাপড়া করতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী আমাকে বিভিন্নভাবে জানিয়েছে, লেখাপড়ায় মন বসাতে পারছে না। সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনায় অলস জীবন! কী পড়ব? সবইতো পারি, পড়তে হবে না। অথবা কিছুই পারি না, কোনটা রেখে কোনটা পড়ব? পরীক্ষা হবে কি? এ ধরনের নানা প্রশ্ন তোমাদের মনে। মনে রেখো, এ বছর তোমাদের এসএসসি পরীক্ষার সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়েছে। প্রস্তুত থাকতে হবে পরীক্ষার জন্য। মনে রাখবে, রুটিন করে সিলেবাস ও মানবণ্টন অনুযায়ী তোমাদের লেখাপড়া চর্চা যদি সঠিক হয়, তবে তোমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবেই, ইনশাআল্লাহ।
করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বলে যতটুকু ক্ষতি হয়েছে বা হচ্ছে, তা পুষিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য মোটেও কঠিন কিছু না। প্রথমেই বলব, যেই সময়টুকু তোমাদের হাতে আছে, তা সঠিকভাবে কাজে লাগাও। তুমি এজন্য একটি রুটিন করে নাও, যেখানে তোমার সব কয়টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে সমান গুরুত্ব দিয়ে। তবে রুটিনে গণিত, উচ্চতর গণিত, পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞানের প্রাধান্য থাকবে। তার পরপরই বাংলা, ইংরেজি, ধর্ম, বাংলাদেশ ও বিশ^ পরিচয়/সামাজিক বিজ্ঞানসহ সব বিষয় নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ রুটিন তৈরি করো। রুটিনে একটি নির্দিষ্ট সময় রাখো কিশোর বাতায়ন ও সংসদ টেলিভিশনের ক্লাসগুলোর জন্য। কারণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও ‘এটুআই’য়ের সহযোগিতায় ঢাকা বোর্ডের তত্ত¡াবধানে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য কিশোর বাতায়ন ফেসবুক পেজে (http://connect.edu.bd) বিশেষ লাইভের ব্যবস্থা করেছে। যেখানে তোমাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের ওপর বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেছেন দেশসেরা শিক্ষকরা। তোমরা এসব ক্লাস থেকে উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।
অধিক রাত জেগে পড়ার দরকার নেই। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাও। খুব ভোরে উঠে এবাদত করে একটু বিশ্রাম নিয়ে পড়তে বসে যাও। সারা রাত ঘুমানোর কারণে তোমার মস্তিষ্ক ঠান্ডা থাকবে, যে কারণে সকালে গাণিতিক বিষয়গুলোকে বেশি গুরুত্ব দিবে। ৪০ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পর একটু বিশ্রাম বা হাঁটাহাঁটি বা বিনোদন দরকার। কারণ ব্রেন ৪০ মিনিটের বেশি মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়। মনে রাখবে, করোনাকালীন তোমাকেই পড়তে হবে। আর এজন্য কিছু জিজ্ঞাসা বা প্রশ্নের উদয় হলে ফোনে বা অনলাইনে শিক্ষকদের সাহায্য নিতে হবে। স্কুল খুলে গেলে তখনও শিক্ষকদের সাহায্য নিতে পারবে। বাংলা ও ইংরেজিতে বানান ও গ্রামারগুলো, হাদিস ও কোরআনের আয়াতগুলো, রসায়নের বিক্রিয়াগুলো, পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন রাশির একক ও গাণিতিক সমস্যাগুলো, জীববিজ্ঞানের চিত্র এঁকে বেশি করে অনুশীলন করো। গণিত ও উচ্চতর গণিতে জ্যামিতি অনুশীলন করার সময় খাতায় সঠিক চিত্র এঁকে বারবার
অনুশীলন করবে।
তোমরা জানো যে, তোমাদের পরীক্ষা পদ্ধতি হচ্ছে সৃজনশীল। সৃজনশীল ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের জন্য মূল বইটির সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের প্রতিটি অধ্যায়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা বারবার অনুশীলন করো। কারণ পরীক্ষায় ভালো করতে মূল বইয়ের বিকল্প নেই। তবে হাতের সময়টিকে কাজে লাগানোর আরও একটি দিক হচ্ছে, তোমার রুটিন অনুযায়ী টেস্ট পেপার অনুশীলন করা। বিভিন্ন বোর্ডের ও গুরুত্বপূর্ণ স্কুলের প্রশ্ন বারবার অনুশীলন করে তা বাসায় বসে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে বোর্ড পরীক্ষার জন্য যোগ্য করে তুলতে হবে। এজন্য যেসব বিষয়ে সাতটি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর করতে হবে, সেসব বিষয়ে তোমাকে প্রতিটি সৃজনশীল প্রশ্নের জন্য ২০ মিনিট টার্গেট করে বাসায় তোমার রুটিন অনুযায়ী বারবার খাতায় লিখে অনুশীলন করতে হবে। তুমি বাসায় বসে জ্ঞানমূলক (ক) ২ মিনিট, অনুধাবনমূলক (খ) ৪ মিনিট, প্রয়োগমূলক (গ) ৬ মিনিট এবং উচ্চতর দক্ষতা (ঘ) ৮ মিনিটের মধ্যে অনুশীলন শেষ করো এবং গণিতে প্রশ্নপত্রের চিন্তন দক্ষতার/ কাঠিন্যের বিভিন্ন স্তরের ভিত্তিতে সহজ স্তরের এমসিকিউ বা বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য তুমি ১০ থেকে ৪০ সেকেন্ড সময় ও সৃজনশীল প্রশ্নে ১ থেকে ৩ মিনিট সময় ব্যয় করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে। মধ্যম স্তরের এমসিকিউ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য তুমি ৪০ থেকে ৬০ সেকেন্ড সময় ও সৃজনশীল প্রশ্নে ৪ থেকে ৭ মিনিট এবং কঠিন স্তরের এমসিকিউ প্রশ্নের জন্য তুমি ৬০ থেকে ৯০ সেকেন্ড সময় ও সৃজনশীল প্রশ্নে ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় ব্যয় করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবে। এভাবে অনুশীলন করলে তুমি পরীক্ষায় ৭টি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর করেও রিভিশনের জন্য ১০ মিনিট সময় পাবে।
মনে রাখবে-
১) শর্ট সিলেবাস অনুযায়ী টেস্ট পেপারের বিগত বছরের বোর্ডের প্রশ্নের সমাধান করবে।
২) প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বা সূত্রগুলো এক নজরে দেখে নাও।
৩) দৈনিক ৭ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে, তবেই মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকবে।
৪) দুধ, ডিম, কলা, সবজিসহ (সম্ভব হলে) পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
৫) শরীর সুস্থ রাখতে হবে। তবেই পড়ায় মন বসবে।
৬) রুটিন অনুযায়ী দৈনিক ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পড়ালেখা করতে হবে।
৭) যে বিষয়টি কঠিন ও জটিল মনে হয়, সে বিষয়টি বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে।
৮) অপ্রয়োজনে টিভি, মোবাইল, ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে দূরে থাকতে হবে।
পরিশেষে বলব, তোমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে করোনা সময়ের সদ্ব্যবহার করবে ও স্বাস্থ্যের প্রতি যতœ নিবে। মা-বাবার কথা শুনবে, তাঁদের সাহায্য নিবে। কারণ তাঁরা তোমাদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। শিক্ষকদের উপদেশগুলো মনে রাখবে। সর্বোপরি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভালো পরীক্ষা দিবে। সবার ভালো ফলাফল ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করছি।

লেখক: মো.মুরাদ হোসেন সরকার/ সিনিয়র শিক্ষক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button