প্রধান প্রতিবেদন

৩০ লাখ টন চাল জুন পর্যন্ত উদ্বৃত্ত থাকবে: ব্রি

অভ্যন্তরীণ খাদ্য চাহিদা পূরণ করেও ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। এ তথ্য এসেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রির এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে কয়েক দফা বন্যায় ৩৫ জেলার আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সারা বছরের উৎপাদন ও চাহিদা বিবেচনা করলে দেশে খাদ্য ঘাটতির ‘আপাতত কোনো আশঙ্কা নেই’।

গত এক মাস ধরে দেশের ১৪ কৃষি অঞ্চলে জরিপ করে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইনস্টিটিউট এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। সারা দেশে চালের উৎপাদন কম ও খাদ্য ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কার কথা যেভাবে ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে, তা আদৌ ঠিক নয় বলে জানিয়েছে ইনস্টিটিউট।

গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বছর আউশ, আমন ও বোরো মিলিয়ে মোট চাল উৎপাদন হবে ৩৭ দশমিক ৪২ মিলিয়ন টন।

মাথাপিছু দৈনিক ৪০৫ গ্রাম চাল ধরে সর্বমোট ১৬ কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যার জন্য এই হিসাব করা হয়েছে। এ ছাড়া মোট ধান উৎপাদনের ২৬ শতাংশ ‘নন-হিউম্যান কনজাম্পশনের’ বাৎসরিক চাহিদা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ থেকে ২০২০ সালের বন্যার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছরই কম বেশি বন্যা হয়েছে দেশে, তবে গত ৪৮ বছরে মধ্যে ১৯৭৪, ১৯৮৭, ১৯৮৮, ১৯৯৮, ২০০৪, ২০০৭, ২০১৫, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে বন্যায় প্লাবিত এলাকা ২২ শতাংশের বেশি ছিল।

গবেষকরা বলছেন, যখন কোনো বছর দেশে বন্যা দুর্গত এলাকা ২২ শতাংশ পেরিয়ে যায়, তখন ধানের উৎপাদন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭০ টন হারে কমে যায়। অন্যদিকে বন্যা দুর্গত এলাকা ২২ শতাংশের কম থাকলে পরবর্তী মৌসুমে উৎপাদন প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৪৯০ টন হারে বৃদ্ধি পায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যে এলাকার বন্যা হয়নি, সেখানে ধানের ফলন প্রায় ৪ দশমিক ৪ শতাশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কম, মাঝারি ও অতি বন্যাপ্রবণ এলাকায় ধানের ফলন যথাক্রমে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ শতাংশ এবং ২৪ দশমিক ১ শতাংশ কম হয়েছে।

সব মিলিয়ে এবার আমন মৌসুমে চালের গড় ফলন হবে প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৩০ টন। যে এলাকায় বন্যা হয়নি সেখানে গড় ফলন প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৬৯ টন। আর কম দুর্গত এলাকায় প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৪২ টন, মাঝারি দুর্গত এলাকায় হেক্টর প্রতি ২ দশমিক ১৮ টন এবং প্রবল বন্যা দুর্গত এলাকায় হেক্টর প্রতি ১ দশমিক ৯৪ টন ফলন হয়েছে।

ধান উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে ব্রির সুপারিশ

  • চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কৃষকদের জন্য ধান ও চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
  • সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে। চাল আমদানির সিদ্ধান্ত যৌক্তিকতা বিবেচনা করে নিতে হবে।
  • বছর বছর বন্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলোর খাল ও নালা খনন ও পুনঃখনন কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। সারা বছর ধানের আবাদ এলাকায় সেচ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রাখতে হবে। সেচ প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে চালু করা এবং মৌসুমব্যাপী কার্যকরের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিকভাবে ধানের আবাদ এলাকা নির্ধারণ করতে হবে।
  • বোরো আবাদে বীজ, সার ও যান্ত্রিকীকরণে প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে হবে।
  • ধান কাটা এবং পরবর্তীতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আমন ধান কেনা বাড়াতে হবে। ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কৃষকবান্ধব করতে হবে। ধান কাটার পর দুই মাস কোনো ধরনের চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না, এক্ষেত্রে বাজার পঞ্জিকা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
  • দেশে অভ্যন্তরীণ চালের চাহিদা, যোগান ও মজুদ পরিস্থিতির সামগ্রিক তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত এবং সহজপ্রাপ্য করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button