
দেশে প্রচলিত ৪১ ভাষার মধ্যে মাত্র ছয়টি ভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছে শিশুরা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, লিখনবিধি না থাকায় বেশিরভাগ ভাষায় পাঠ্যবই তৈরি করা দুরূহ।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের হিসেবে, দেশে বাংলাসহ ৪১ ভাষার প্রচলন আছে। এর মধ্যে বাংলা ভাষার বাইরে পাঠ্যবই প্রণয়ন করা গেছে পাঁচটি ভাষায়।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গবেষণা কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বলেন, ২০১৭ থেকে পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুরা মাতৃভাষায় পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। এই নৃগোষ্ঠীগুলো হলো চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা (ককবরক), গারো ও ওঁরাও (সাদরি)।
এর মধ্যে চাকমা ও মারমা ভাষার বইগুলো তাদের নিজস্ব লিপিতে লেখা। কিন্তু বাকি তিনটি নৃগোষ্ঠীর বই লেখা হচ্ছে কোনোটি বাংলা লিপিতে, কোনোটি রোমান হরফে।
প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে পর্যন্ত এই বইগুলো ছাপা হচ্ছে। এর বিস্তৃতি বাড়াতে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। মাতৃভায়ায় বই ছাপানোর কারণে এসব নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সাড়া পড়েছে। তারা তাদের ভাষায় এগুলো পড়তে পারছে।
দেশে টিকে থাকা ভাষাগুলোর মধ্যে ১৪ ভাষার কোনো লেখ্যরূপ না থাকায় এগুলো সংরক্ষণ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। লেখ্যরূপ না থাকায় প্রণয়ন করা যাচ্ছে না পাঠ্যবইও।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা ছাড়া সবচেয়ে প্রচলিত ভাষা চাকমা। এ ভাষায় এখন কথা বলে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৮ জন। এর পরে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ২ হাজার ৯৭৪ জন কথা বলে মারমা ভাষায়। এ ছাড়া ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১২ জন কথা বলে সাঁওতালি, ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৯৮ জন ককবরক ও ৮৪ হাজার ৫৬৫ জন কথা বলে গারো ভাষায়।
সবচেয়ে বিপন্ন রেংমিরচা ভাষা। মাত্র ২০ জন মানুষ কথা বলে এ ভাষায়। এ ছাড়া এ তালিকায় থাকা নেপালি ভাষায় কথা বলছে পাঁচ শ জন, লুসাই ভাষায় ৯৫৯ জন, খারিয়া ও সউরা ভাষায় ১ হাজার জন করে কথা বলছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ বলেন, একটা বিষয় হলো কোনো ভাষার লিখন বিধি আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে ওই ভাষাটি সহজে ব্যবহার করা যাবে। কিছু ভাষা আমাদের দেশে আছে যেগুলোর লিখনবিধি নেই।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেশে প্রচলিত ভাষাগুলোর পরিবার বিন্যাস অনুযায়ী সিনো-তিব্বতী পরিবারের ভাষা ১৬, অস্ট্রো-এশিয়াটিক আট, ইন্দো-ইউরোপীয় ১৩ ও দ্রাবিড় পরিবারের ভাষা পাঁচ। এদের মধ্যে বাংলা ছাড়া লিখনবিধি আছে চাকমা, মারমা, রাখাইন, মনিপুরী মেইতেই, মনিপুরী বিষ্ণুপ্রিয়া, তঞ্চঙ্গা ও সাঁওতালি ভাষার।
২০১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের জন্য পাঁচটি নৃগোষ্ঠির ভাষায় পাঠ্যবই প্রচলন শুরু করা হয়। ফলে এ শিশুরা তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় শিখতে পারছে।